পারিজাত মোল্লা: শুক্রবার এজলাসে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আরেক বিচারপতি অমৃতা সিনহার স্বামীর বিরুদ্ধে সিআইডি-র তত্পরতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি। বিচারপতি সিনহার স্বামীর বিরুদ্ধে চলা এই মামলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের কাছে তাও জানতে চান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
শুধু তাই নয়, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের উদ্দেশ্যে বিচারপতি পরামর্শ দিয়ে বলেন, -‘রাজ্যকে আপনি বিভিন্ন বিব্রতকর অবস্থা থেকে বাঁচাতে পারেন।চেষ্টা করে দেখুন’। তবে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এ বিষয়ে প্রশ্ন করলেও রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কোনও মন্তব্য করেননি।
বর্তমানে বিচারপতি অমৃতা সিনহার স্বামী আইনজীবী প্রতাপচন্দ্র দে-র বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। সুপ্রিম কোর্টই সিআইডি-কে কোনওরকম চাপে প্রভাবিত না হয়ে মামলার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। এ প্রসঙ্গেও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এদিন জানান, -‘ সুপ্রিম কোর্ট তো সিআইডি এবং রাজ্যকে অনেক নির্দেশ দেয়।
সব নির্দেশ কি রাজ্য বা সিআইডি একই রকম ভাবে মেনে চলে?’সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ দিয়ে একটি মামলায় বিচারপতি অমৃতা সিনহার আইনজীবী স্বামী প্রতাপচন্দ্র দে-কে দু বার ভবানী ভবনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে সিআইডি।
যদিও তদন্ত এবং জিজ্ঞাসাবাদের নামে সিআইডি আসলে তাঁকে হেনস্থা করছে বলে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করেছেন প্রতাপচন্দ্র দে।তবে দু বার হাজিরা দিলেও সিআইডি-র তলব সত্ত্বেও তৃতীয় হাজিরা এড়িয়েছেন প্রতাপচন্দ্র দে। উল্টে জিজ্ঞাসাবাদের নাম সিআইডি মানসিক হেনস্থা করায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে দাবি করে সিআইডি-কে আইনি চিঠি পাঠিয়েছেন প্রতাপচন্দ্র দে।
সিআইডি-র অতিসক্রিয়তার বিরুদ্ধে আইন পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।চিঠি পাঠিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপালের কাছেও। এসবের মধ্যেই এবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যের এজির উদ্দেশে প্রশ্ন করলেন, বিচারপতি সিনহার স্বামীকে কেন প্রায়ই ডেকে পাঠাচ্ছে সিআইডি? এটি কি এতই গুরুত্বপূর্ণ মামলা?
প্রসঙ্গত, শুক্রবার বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে আলিপুরদুয়ারের মহিলা ঋণদান সমবায় সমিতিতে দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলে । সেই মামলার শুনানির সময়ই এই মন্তব্য করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এর আগেও যে বিভিন্ন সময়ে আদালতের নির্দেশ না মানার কারণে রাজ্যকে কিংবা সিআইডিকে ভর্ত্সনার মুখে পড়তে হয়েছিল, সেকথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, ‘সুপ্রিম কোর্ট সিআইডি বা রাজ্যকে অনেক নির্দেশ দেন।
সব নির্দেশ কি রাজ্য বা সিআইডি মেনে চলে?’এদিন আলিপুরদুয়ারের সমবায় সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলাকালীনই রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি অ্যাডভোকেট জেনারেল উদ্দেশে বলেন, “রাজ্যকে আপনি বিভিন্ন বিব্রতকর অবস্থা থেকে বাঁচাতে পারেন। চেষ্টা করে দেখুন।” আলিপুরদুয়ারের ওই সমবায়ের দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তভার সিবিআই-এর উপর দিয়েছে হাইকোর্ট।
সেই প্রসঙ্গ টেনেও এদিন বিচারপতি বলেন, ‘এই মামলায় সিআইডি কিছুই করতে পারেনি বলে সিবিআইকে দেওয়া হয়েছিল।’ একইসঙ্গে আলিপুরদুয়ারের ওই মামলায় এদিন বিচারপতি জানিয়েছেন,-‘ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সিবিআইকে গাড়ি ও আটজন পুলিশ অফিসার দেবে রাজ্য’। তবে উত্তরবঙ্গে অফিস দেওয়ার জন্য ২ মাস সময় চায় রাজ্য এবং আদালত সেই সময় দিয়েছে রাজ্যকে।ঠিক এই রকম পরিস্থিতি তে সিআইডির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।