আবদুল ওদুদঃ ২০২০ সালের ২৩ মার্চ হঠাৎ করে গোটাদেশে লকডাউন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাশাপাশি এরাজ্যেও চালু হয় লকডাউন। স্বাভাবিকভাবেই বহু মানুষ কাজ হারিয়ে ঘরবন্দি হন। অনেকে কাজ হারিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েন। কি করবেন ভেবে কিনারা করতে পারছেন না। এই রকমই একজন জিনাত নাসিম। বাড়ি বীরভূমের সিউড়িতে। তিনি এমনিতেই গৃহবধূ। কিন্তু তিনি ফ্যাশন ডিজাইনার। বাড়িতে টুকটাক পোশাক তৈরি করেন। আর ফেসবুক করেন। আর তাতেই কিছু অর্ডার পান। এই ভাবেই চলছিল তার জীবন। লকডাউন শুরু হতেই অন্য ভাবনা নিয়ে শুরু করেন ‘জিনাত ক্রিয়েশন’। সিউড়িতে তৈরি করলেন একটি বুটিক। কিন্তু লকডাউনে কিভাবে হবে বেচাকেনা। সেই চিন্তা মাথায় ঘুরছে। ফেসবুকে আরও সময় দিতে শুরু করেন। তাতেই মেলে বিপুল সাড়া। তার নিজের ফেসবুক পেজ থেকে জিনাত ক্রিয়েশন পেশ জনপ্রিয়তা পেয়ে আজ সফল ব্যবসায়ী জিনাত নাসিম। এখন দু’টি সেন্টার– একটি রানীগঞ্জ টাউনে– যার নাম ‘বৃন্দাবন।’ আর সিউড়িতে ‘জেড সি।’
জিনাত নাসিমের জীবন এইভাবে শুরু হলেও এখন কিন্তু একা নন– তাঁর এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে– প্রায় ১৫টি পরিবার।
পুবের কলমকে তিনি বলেন– ফেসবুক পেজ দিয়ে ব্যবসা শুরু হলেও কাজের গতি বাড়তে থাকে। লকডাউনে এলাকায় প্রচুর মহিলা বাড়িতে বসে রয়েছেন। তাদের কাজে লাগানো ভাবনা আসে। মহিলারা পুরুষদের থেকে অনেক বেশি কাজ করতে পারেন। বাড়িতে সংসার সামলানোও হবে আবার হাতের কাজ করে কিছু আয় হবে। সাত-পাঁচ না ভেবে নিজে পোশাক ডিজাইনার হওয়ায় কিছু মহিলাকে কাজ শেূানো শুরু করেন– দ্রততার সঙ্গে কাজ শিখে নেন। তাঁদের প্রত্যেককে একটি করে সেলাই মেশিনও দেন। এখন প্রায় ১৫ জন মহিলা সংসার সামলানোর পাশপাশি পোশাক তৈরি করে সংসারের হাল ধরেছেন। এই সমস্ত মহিলাদের কাজের ছোঁয়ায় ব্যবসায়ও আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। অনলাইনে কিংবা ফেসবুকে অর্ডার ছাড়াও সিউড়ি ও রানীগঞ্জের দোকানে ভিড় বাড়ছে।
মহিলা কারিগর প্রসঙ্গে জিনাত জানান– পুরুষদের দিয়ে প্রথমে কাজ করানো হত। কিন্তু– কিছুটা সমস্যা হত। তাই মেয়েদের দিয়ে কাজ শুরু করি। তাতে সাফল্যও এসেছে। মেয়েরা সকাল ১১ টা পর্যন্ত বাড়িতে সংসার সামলে কাজ করেন। আবার কয়েকজন আছেন যাঁরা তাঁর কাছ কাজের অর্ডার নিয়ে গিয়ে বাড়িতে পোশাক তৈরি করে দিয়ে যান। এইভাবেই ১৫টি পরিবারকে লকডাউনের মধ্যে থেকেই কাজের সুয়োগ করে দিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে করোনা বিধিনিষেধ থাকলেও তাদের সংসার চালাতে কোন অসুবিধা হয় না। লকডাউনেও তাদের অসুবিধা হয়নি। তিনি বলেন– মেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে এসব দেখে আনন্দ পাই। এখন লকডাউন কিংবা করোনাবিধি নিষেধে অনেকে কাজ হারিয়েছেন। তখন কিছু মানুষকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারা কার না ভালো লাগে বলুন। করোনা আবহে যখন কিছু মানুষকাজ হারাচ্ছেন–তখন কিছু মহিলাকে কাজের সুয়োগ করে দিতে পেরেছেন তিনি।
কি ধরনের পোশাক তৈরি হচ্ছে, এ প্রসঙ্গে জিনাত জানান– মেয়েদের সমস্ত পোশাক তৈরি হয় এখানে। পাশাপাশি বীরভূমের কাঁথা স্টিচের কাজও ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে পোশাকে। সমস্ত শালীন পোশাক তৈরি করছেন তারা।