ইনামুল হক, বসিরহাট: সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। মেঘলা আকাশে সূর্যের দেখা নেই। শনিবার সকাল থেকেই হালকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়। আমফান, ইয়াস, শাহীন এর পর ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ। উত্তর ২৪ পরগনরা বসিরহাট মহকুমার সুন্দরবনের হাড়োয়া ব্লকের খাসবালান্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদ্যাধরী নদীর পাড়ে গাবতলা আদিবাসী গ্রামে জাওয়াদের হাত থেকে রক্ষা পেতে একদিকে বিরসা মুন্ডার গলায় মালা দিয়ে, অন্যদিকে ভূমি রক্ষাকারী গাছ পূজার মধ্য দিয়ে বড় বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার ডাক দিলেন কয়েকশো গ্রামবাসী।
শনিবার সকাল থেকে উলু ,শঙ্খধ্বনি, ধুপ বটবৃক্ষকে মালা পরিয়ে চলল প্রার্থনা। পাশাপাশি মসজিদে মসজিদে দোয়ায়ে শামিল হলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। যাতে আম্ফান এর মত বড় বিপর্যয়ের কবলে না পড়তে হয় এলাকার বাসিন্দাদের। সর্ব ধর্মীয় এই প্রার্থনা অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার তৃণমূলের চেয়ারম্যান শেখ হাজী নুরুল ইসলাম, বিশিষ্ট তৃণমূল নেতা নুরুল ইসলাম, আদিবাসী নেতা প্রশান্ত মাহালি, হাড়োয়া ১ ব্লক সভাপতি শফিক আহমেদ, খালেক মোল্লা, বিশিষ্ট সমাজসেবী সুশান্ত বিশ্বাসসহ বিশিষ্টজনেরা। ‘সুন্দরবন বাঁচলে তুমি বাঁচবে’ এই ছিল সাধারণ মানুষের আকুতি বা মনস্কামনার বার্তা।
অন্যদিকে ওমিক্রন আতঙ্কের মধ্যেই করোনা বিধি মেনে সুন্দরবনে চলছে জাওয়াদ থেকে রক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বসিরহাট মহকুমার সুন্দরবনের সন্দেশখালি ১ ও ২ নং, হিঙ্গলগঞ্জ, হাড়োয়া, মিনাখাঁ ও হাসনাবাদসহ দশটি ব্লকে ইতিমধ্যে জাওয়াদের সতর্কবার্তা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। বিশেষ করে সন্দেশখালির দুটি ও হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের দিকে বেশি নজর দিয়েছে প্রশাসন। দুর্বল নদীবাঁধ গুলিকে বেঁধে শক্ত পোক্ত করার কাজ চলছে পুরোদমে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবেলা দলের ২৬ জনের একটি দল তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে সন্দেশখালি ১ ও ২ নম্বর ব্লক ও হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের মূল পয়েন্টে পৌঁছেছে।
একদিকে বিদ্যাধরী, ইছামতী, রায়মঙ্গল, কালিন্দী ও গৌড়েশ্বর নদীতে মাইকিং প্রচার শুরু হয়েছে।অন্যদিকে সিভিল ডিফেন্সের একশো কুড়ি জনের প্রতিনিধি দল ৬টি দলে বিভক্ত হয়ে হাড়োয়া, মিনাখাঁ ও হাসনাবাদের মতো সুন্দরবনের ব্লক গুলিতে পৌঁছে গিয়েছে। মৎস্যজীবীদের সতর্কবার্তা জারি করেছে। অন্যদিকে সমস্ত নদীর পাড়ের মানুষকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিছু বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এছাড়া বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার পক্ষ থেকে মেডিক্যাল টিমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সন্দেশখালি ১নং ব্লকে ৮টি, সন্দেশখালি ২ নং ব্লকে ৭টি ও হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক মিলে মোট কুড়িটি মেডিক্যাল দলকে পাঠানো হয়েছে। তারা মোবাইল ভ্যানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জল বাহিত রোগ অর্থাৎ আন্ত্রিক, ডায়রিয়া বিভিন্ন রোগের জন্য তাদেরকে একদিকে যেমন চিকিৎসা করছে অন্যদিকে ওষুধ দিচ্ছে। এছাড়া অক্সিজেন সিলেন্ডার মজুদ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ৫০,০০০ জলের পাউচ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পাশাপাশি সুন্দরবন লাগোয়া বিভিন্ন ত্রাণশিবির ও বড় বড় স্কুল বাড়িকে কোভিড বিধি মেনে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মানুষকে সরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এছাড়া যেসব গরু-ছাগলসহ গবাদি পশুদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পাকা ধান ও সব্জি, ফসল ঘরে তোলার কাজ চলছে পুরোদমে।