রফিকুল হাসান, শাসন: আইএসএফ ও তৃণমূলের সংঘর্ষে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াল উত্তর ২৪ পরগনার শাসন থানা এলাকায়। এই ঘটনায় দুই পক্ষের ৮ জন গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার প্রতিবাদে শাসন থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। জড়িয়ে পড়েন পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায়। অপরদিকে শাসন অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে আইএসএফের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বারাসাত দুই ব্লকের শাসন এলাকার খড়িবাড়ি, আমিনপুর ও কাঁচকল মোড়ে নির্বাচনী প্রচারসভা ছিল আইএসএফের। বসিরহাট লোকসভার আইএসএফ প্রার্থী আখতার রহমান বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে পথসভা ও মিছিল করার কথা ছিল বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর। কিন্তু তৃণমূলের বাধায় সেই সমস্ত মিটিং মিছিল করা যায়নি বলে অভিযোগ তাঁদের। এদিন সকালে খড়িবাড়ি বাজারে আইএসএফের ঝান্ডা লাগানোকে কেন্দ্র করে তৃণমূল পন্থী ও আইএসএফ পন্থী দুই ভাইয়ের মধ্যে মারামারি হয়। পাশাপাশি আমিনপুর বাজারে ঝান্ডা লাগাতে আসার সময় পলতাডাঙ্গা মোড়ে আইএসএফ ও তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় দুজন আইএসএফ কর্মী গুরুতর জখম হন এবং শাসনের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি শহিদুল ইসলামও আক্রান্ত হন। অপরদিকে কাচকল এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। কাঁচকলের বকন্ড এলাকায় দুই পক্ষের মারামারিতে আরো দুজন আইএসএফ কর্মী জখম হন। এই ঘটনায় মোট চার জন আইএসএফ কর্মী গুরুতর জখম হন ও চার জন তৃণমূল কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। অপরদিকে শাসন অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয় ভাংচুর করেছে আইএসএফ এমনটাই অভিযোগ তৃণমূলের। এই নিয়ে বিক্ষোভও দেখান তৃণমূল কর্মীরা।
শাসন এলাকায় আইএসএফ কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। কেন নির্বাচনী প্রচার করতে দেওয়া হচ্ছে না? এই অভিযোগ তুলে শাসন থানা ঘেরাও করেন বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। শাসন থানার সামনে রাজারহাট রোড অবরোধ করেন আইএসএফ কর্মী সমর্থকরা। পরে থানার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন নওশাদ। এসডিপিও শাসন উৎপল পুরকাইতকে “দালাল” বলে সম্বোধন করেন নওশাদ। পুলিশের বিরুদ্ধে হুমকির সুরে তিনি বলেন কোর্টে গিয়ে আমরা বুঝে নেব। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নওশাদ সিদ্দিকী ঢোক গিলে পুলিশকে দালাল বলার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আজকে পুলিশের জন্যই আমরা এই মিটিং মিছিল করতে পারলাম না। তৃণমূল নেতাদের কথায় থানা চলছে। আমাদের কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন, যারা এসব ভয় দেখাচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর তৃণমূলের পার্টি অফিসে ভাংচুরের কথা অস্বীকার করে নওশাদের জবাব, আইএসএফ যদি শাসনে এতো শক্তিশালী হতো তাহলে এই সভা করতে পারতো। ওরা নিজেরাই ভাংচুর করে আইএসএফ কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দেবে বলে এসব নাটক।
এ ব্যাপারে বারাসাত দুই পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি তথা ফলতি বেলিয়াঘাটা অঞ্চল তৃনমূলের সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, আমাদের চারজন কর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশ তো এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। এসব যা বলছে সব মিথ্যা অভিযোগ। আসলে ওরা বিজেপির মতো পলিটিক্স করছে, ওদের পিছনে কোনো লোক নেই। আমাদের এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর প্রতিষ্ঠিত তৃণমূল দলের সঙ্গে মানুষ রয়েছে। ফের নতুন করে শান্ত শাসনকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। এই ঘটনায় দুই পক্ষই শাসন থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। এলাকা থমথমে থাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে ও র্যাফ নামানো হয়েছে। অন্যদিকে আমিনপুর বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এদিন সকাল থেকেই জোরকরে আমিনপুর বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ করে দিয়ে যেন অঘোষিত বন্ধ পালন করা হয়েছে। এর জবাব মানুষ ভোট বাক্সে দেবে।