পুবের কলম প্রতিবেদক: আইনের নাম, ধরন ইত্যাদি ধীরে ধীরে পালটে ফেলা হচ্ছে। এবার মোদি সরকারের কোপে পড়ল ‘ইন্ডিয়া’। ভারতের নাম আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইন্ডিয়া। এবার সেই নাম পালটে ‘ভারত’ করার অভিযোগ সামনে এসেছে। এ নিয়ে মোদি সরকারকে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এমন করে দেশের নাম বদলের আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কি না তা নিয়েই মূলত তিনি মন্তব্য করেন। এবার মুখ খুললেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। একইসঙ্গে সরকারের কি করা উচিত, এ নিয়ে পাঁচটি কতর্ব্য মনে করান অভিষেক। তৃণমূল সাংসদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়ে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে নজর সরাতেই এ হেন বিতর্ক তৈরি করছে।
বুধবার ‘এক্স’ (পূর্বতন নাম ট্যুইটার)-এ একটি পোস্ট করে অভিষেক বলেন, দেশের নাম নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে আসলে বিজেপি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে সাধারণের দৃষ্টি ঘোরাতে চাইছে। এর পরেই সরকারের কোন কোন বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত তা নিয়ে বলেন, আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। একইসঙ্গে অভিষেকের পরামর্শ, কেন্দ্র যেন ডাবল ইঞ্জিন সরকার আর জাতীয়তাবাদের ফাঁকা বুলি না আওড়ায়।
প্রসঙ্গত, জি২০ সম্মেলন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর দেওয়া বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে ‘দ্য প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’র বদলে ‘দ্য প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ লেখা নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। পরে ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত’ লেখা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইন্দোনেশিয়া সফরের প্রচারপত্র সামনে আনে বিজেপি। তা নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়ে যায় জাতীয় রাজনীতিতে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল স্পষ্টতই জানান, বিরোধী জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ হওয়াতেই বিজেপি আচমকা ‘ভারত’ নাম নিয়ে রাজনীতির ময়দানে। আক্রমণ করা হয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও। এক্স-এ রমেশ মঙ্গলবার লেখেন, ‘তা হলে যেটা শুনেছিলাম, সেটাই সত্যি! আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি ভবনে জি২০ নেতাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’, অথচ চিরাচরিতভাবে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ লেখাই দস্তুর।’
অন্যদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই সরব হন। মঙ্গলবার শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে মমতা বলেন, ‘আজকে তো ইন্ডিয়ার নাম চেঞ্জ করে দিচ্ছে বলে আমি শুনলাম। মাননীয় রাষ্ট্রপতির নামে যে কার্ড হয়েছে, জি২০-র লাঞ্চে না ডিনারে, তাতে লেখা আছে ভারত বলে। আরে ভারত তো আমরা বলি। এতে নতুনত্ব কী আছে?’ তিনি আরও বলেন, ‘ইংরিজিতে বলি ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়ান কনস্টিটিউশন। হিন্দিতে বলে ভারত কা সংবিধান। ভারত তো আমরাও বলি, ভারত আমার ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো। এতে নতুন করে কিছু বলার নেই। কিন্তু ইন্ডিয়া নামে সারা বিশ্ব চেনে। হঠাৎ এমন কী হল?’ মোদি সরকারকে চড়া সুরে আক্রমণ শানিয়ে মমতা অভিযোগ করেন, ‘আজকে দেশের নামটাও চেঞ্জ হয়ে যাবে। কবে রবি ঠাকুরের নাম চেঞ্জ হয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নাম চেঞ্জ করে দেওয়া হচ্ছে। বড় বড় ঐতিহাসিক সৌধের নাম বদল করে দেওয়া হচ্ছে। ইতিহাসকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে।’