বিশেষ প্রতিবেদন: ক্যানসার একটি মারণরোগ। এই কঠিন অসুখের কথা কারুর অজানা নয়। এখনও এই রোগ নিরাময়ের ওষুধ নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে। ২০১৯ সালে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে ৯.৩ লক্ষ বা ৯,২৯,৬০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, সেইসঙ্গে ওই বছরেই ১.২ মিলিয়ন নতুন ক্যানসারের ঘটনা সামনে আসে।
এই মারণরোগের ঘটনা তীব্রভাবে বৃদ্ধি ও মৃত্যু নিয়ে ১৯৯০-২০১৯ একটি সমীক্ষা চালানো হয়। দ্য ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ সাউথইস্ট এশিয়া জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মৃত্যুতে এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে ভারত দ্বিতীয় স্থানে আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে ভারত ছাড়াও চিন ও জাপানে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছিল বলে রিপোর্টে প্রকাশ। ওই বছর তিন দেশে মারণ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মোট ৯৪ লক্ষ। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল ৫৬ লক্ষ ক্যানসার আক্রান্তের।
প্রতিবেদন অনুয়ায়ী ২০১৯ সালে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যায় এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে চিন। ওই দেশে ৪৮ লক্ষ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মৃত্যু হয়েছিল ২৭ লক্ষ আক্রান্তের। সেই তুলনায় জাপানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল অনেক কম। ৯ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হলেও, ৪.৪ লক্ষের মৃ্ত্যুর খবর রেকর্ড করা হয়েছিল।রিপোর্টে প্রকাশ, মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জরায়ুতে ক্যানসার ধরা পড়ে। বিশেষত মহিলাদের মধ্যে, জরায়ুর মুখের ক্যানসার এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে দ্বিতীয় বা শীর্ষ পাঁচটি ক্যানসারের মধ্যে স্থান পেয়েছে।
২০০৬ সালে প্রবর্তিত হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধে এবং এইচপিভি-সম্পর্কিত মৃত্যু কমাতে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ক্যানসারের জীবাণু সবেচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছিল শ্বাসনালী এবং ফুসফুসে। এই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষ। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল ১২ লক্ষের। পুরুষদের মধ্যেই শ্বাসনালী এবং ফুসফুসে ক্যানসারের লক্ষণ বেশি রেকর্ড করা হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্বে ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন দিন দিন বাড়ছে। অতিরিক্ত সেবনের ফলেই এই মারণরোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে দূষিত বায়ুও ক্যানসার রোগ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এই ক্যানসার বৃদ্ধির প্রবণতা এশিয়ার দেশগুলি মধ্যে বেশি বলে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল পাকিস্তানের মতো দেশে গুটকা, পান, খইনি খাওয়ার প্রচলন বেশি। এ সব থেকে মুখের ক্যানসার বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। ভারতে ক্যানসার বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ২৮ শতাংশ ক্ষেত্রে দায়ী গুটকা জাতীয় খাবার। পাকস্থলী ও স্তন ক্যানসারের ঘটনা বছরের পর বছর ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গবেষণার প্রধান লেখক এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি কুরুক্ষেত্রের সহকারি অধ্যাপক ডাঃ রাজেশ শর্মা জানিয়েছেন, উচ্চ লবণযুক্ত খাবার খাওয়া, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, স্থূলতা, দূষণ, ক্যানসার রোগ দ্রুতহারে বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ডাঃ শর্মা আরও জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলিতে, ক্যানসার আক্রান্তের ৫ বছর ধরে বেঁচে থাকার হার প্রায় ৭০ শতাংশ, তবে ভারত সহ উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এটি উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এছাড়াও ক্যানসারের পিছনে জেনেটিক প্রবণতা একটি বড় ভূমিকা পালন করে।