পারিজাত মোল্লা: বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মিডলম্যান প্রসন্নকুমার রায়ের জামিনের আবেদন খারিজ হল। গ্ৰুপ ডি কর্মী নিয়োগের মামলার পর নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ মামলাতেও প্রসন্নকুমার রায়ের জামিনের আবেদন খারিজ করল আদালত। বৃহস্পতিবার দু’টি মামলারই শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টে।
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চ এদিন জানায়, ‘তদন্তের এই পর্যায়ে মামলাকারীকে জামিন দেওয়া যাবে না। তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করা দেওয়া হল’। প্রসন্নের আইনজীবী বলেন, ‘নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তাঁর মক্কেলকে এসএসসি’র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিন্হার প্রধান এজেন্ট হিসেবে বলা হয়েছে। অথচ সিবিআই গ্রুপ ডি মামলায় এখনও শান্তিপ্রসাদকে গ্রেফতার করেনি’।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের তদন্তে নেমে প্রথম যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম প্রসন্ন রায়। তাঁর জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে সিবিআই-এর আইনজীবী আদালতে জানান, ‘প্রসন্ন রায় এই দুর্নীতির অন্যতম কিং পিন। বিধাননগরে ট্রাভেল এজেন্সির আড়ালে চাকরি বিক্রির কারবার চালাতেন তিনি’। সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতে জানান, ‘স্কুলের গ্ৰুপ ডি পদে চাকরি পাইয়ে দিতে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুললেন প্রসন্নকুমার। তার পর তা শান্তিপ্রসাদের কাছে পৌঁছে দিতেন। সাড়ে ৪ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের হিসাব মিলেছে। অনেক চাকরিপ্রার্থীই চাকরির বিনিময়ে প্রসন্নকে টাকা দিয়েছেন বলে স্বীকার করে নিয়েছেন’।
বৃহস্পতিবার ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ‘গ্ৰুপ ডি মামলায় সিবিআই-ই তদন্ত চালাবে। তদন্তের প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা শান্তিপ্রসাদকে গ্রেফতার করবে কি না? সেটা তারা ঠিক করবে। তবে আদালত তদন্তের এই পর্যায়ে পৌঁছে প্রসন্নকুমারের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করবে না’। ফলে এসএসসি গ্রুপ ডি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় লিঙ্কম্যান প্রসন্ন রায়ের জামিনের আবেদন খারিজ করল জয়মাল্য বাগচি এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গকান্তের ডিভিশন বেঞ্চ।
এদিন আদালতে সিবিআই দাবি করে, ‘নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত প্রাক্তন আমলা শান্তিপ্রসাদ সিনহার প্রধান এজেন্ট ছিল এই প্রসন্ন রায়। সেই সূত্রে প্রসন্ন রায়কে ঘিরে ৪.৫ কেটির লেনদেনের হদিস মিলেছে’। অনেক চাকরিপ্রার্থী চাকরির বিনিময়ে প্রসন্নকে টাকা দিয়েছেন বলে তদন্তে স্বীকার করেছেন বলেও আদালতকে জানায় সিবিআই।
অন্যদিকে, প্রসন্নের আইনজীবী এদিন আদালতে সওয়াল করেন, ‘নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁর মক্কেলকে শান্তিপ্রসাদ সিনহার প্রধান এজেন্ট হিসাবে বলা হয়েছে। অথচ সিবিআই এই মামলায় গ্রুপ ডি এখনও শান্তিপ্রসাদকে গ্রেফতারই করেনি। সব শুনে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, তদন্তের এই পর্যায়ে জামিন মঞ্জুরের পরিস্থিতি নেই। এস পি সিনহা’র ভূমিকা নিয়ে পদক্ষেপ করবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সি’।
অপরদিকে, নিয়োগ মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রী শতরূপা ভট্টাচার্যকে আগেই জামিন দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। জামিনের জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন মানিকের পুত্র শৌভিক ভট্টাচার্যও। কিন্তু তাঁর আবেদনের শুনানি পিছিয়ে গিয়েছে। গত বুধবার ওই মামলার শুনানির কথা ছিল। আদালত জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহে শুনানি হবে। জামিন চেয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বেঞ্চে আবেদন জানান শৌভিক। গত বুধবার সেখানে মামলাটি শুনানির জন্য উঠলে তদন্তকারী সংস্থা ইডির তরফে কিছুটা সময় চেয়ে নেওয়া হয়। তারা জানায়, ‘এই মামলার তদন্তকারী আধিকারিক পরিবর্তিত হয়েছেন। নতুন করে এই মামলায় ইডির বক্তব্য জানানো হতে পারে। তার জন্য দু’দিন সময় দরকার’। বিচারপতি ইডির বক্তব্য শুনে আগামী সপ্তাহে মামলাটির শুনানির দিন ধার্য করেছেন।