পুবের কলম প্রতিবেদক: দু’দফার ভোট সম্পন্ন। এবার তৃতীয় দফার পালা। তারই প্রচারে বাংলায় এসে হিন্দুত্বের তাস খেললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ দিন নদিয়া, বর্ধমান ও বোলপুরে সভা করেন মোদি। তিন সভা থেকেই ধর্মীয় মেরুকরণের তাস খেললেন তিনি। শুধু তাই নয়, বাংলার পরিস্থিতি কাশ্মীরের থেকেও খারাপ বলে মন্তব্য করলেন। এক কথায়, বাংলায় এসে ফের বিভাজনের রাজনীতি করে গেলেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলায় শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে কাশ্মীরের সঙ্গে বাংলার তুলনা টেনে আনেন মোদি। বলেন, কয়লা থেকে গরু, রেশনের মতো একাধিক ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রেও কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। রাজ্যের শিশুদের ভবিষ্যৎ খারাপ হচ্ছে। একটা সময়ে কাশ্মীরের জায়গায় জায়গায় স্কুল পুড়িয়ে দিচ্ছিল জঙ্গিরা। সেই সময় কাশ্মীরের কিছু রাজনৈতিক নেতা ও গ্রামবাসীদের আমি আমার দিল্লির বাসভবনে ডেকেছিলাম। তাঁদের বলেছিলাম, আর কোনও স্কুল জঙ্গিরা যাতে পোড়াতে না পারে আপনারা তার ব্যবস্থা করুন। কারণ, স্কুল পোড়ানোর অর্থ শিশুদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হওয়া। তাঁরা কথা রেখেছিলেন। কাশ্মীরের মানুষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে পারলেও বাংলায় শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি করে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করা হচ্ছে। তৃণমূল নেতাদের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। টাকা নিয়ে ওএমআর সিট বদল করা হয়েছে।
এক একটি পদের জন্য ৪-৬ লক্ষ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। বাংলায় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হচ্ছে। আমি কথা দিচ্ছি আমি এদের শাস্তি দেব। চাকরিচ্যুতদের উদ্দেশ্যে মোদি বলেন, যে-সব যোগ্যদের চাকরি গিয়েছে তাঁদের পাশে দাঁড়াবে বিজেপি। তৃণমূলের দুর্নীতির জন্য ২৫ হাজার শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। এদের মধ্যে অনেক যোগ্য ব্যক্তি রয়েছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়াবে বিজেপি। তাঁদের আইনি সাহায্য দেওয়া হবে।’
এ দিন পুরোদমে নিজের আস্তিন থেকে হিন্দুত্বের তাসগুলি একে একে বের করতে শুরু করেন মোদি। মোদির অভিযোগ, রাজ্যে হিন্দুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করে রেখেছে তৃণমূল সরকার। ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের একটি মন্তব্যকে হাতিয়ার করে মোদি বলেন, ‘আমি কাল টিভিতে দেখলাম, এখানে বাংলায় তৃণমূলের এক বিধায়ক প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে।
তিনি বলছিলেন, হিন্দুদের ২ ঘণ্টায় ভাগীরথীতে ভাসিয়ে দেব। এটা কী ধরনের ভাষা? কী ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ? হিন্দুদের ভাসিয়ে দেবে? সত্যিই, কী হাল হয়েছে? বাংলায় হিন্দুদের সঙ্গে কী হচ্ছে? মনে হচ্ছে বাংলায় হিন্দুদের দ্বিতীয় স্তরের নাগরিক করে রেখছে তৃণমূল সরকার।’
সন্দেশখালি ইস্যু নিয়ে বলতে গিয়ে এবার সরাসরি বিভাজনের রাজনীতিতে হাঁটলেন মোদি। বললেন, ‘এদের জয় শ্রীরাম বলতে সমস্যা। জয় শ্রীরাম বলতে বললে ওদের জ্বর আসে। এদের রামমন্দির তৈরিতে সমস্যা। এদের রামনবমীর শোভাযাত্রায় সমস্যা। আমি আজ তৃণমূল সরকারকে প্রশ্ন করতে চাই, সন্দেশখালিতে দলিত বোনেদের সঙ্গে অন্যায় হল। কিন্তু তৃণমূল অপরাধীকে বাঁচাতে ব্যস্ত ছিল। তা কি শুধু এইজন্য যে অপরাধীর নাম ছিল শাহজাহান শেখ?’ এবারের ভোটে কোন দল কত আসন পাবে তারও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন মোদি। তাঁর দাবি, সারাদেশে ১৫টি আসনও পাবে না তৃণমূল। আর কংগ্রেস ৫০ আসন পার করতে পারবে না। বামেদের কটাক্ষ করে বলেন, এখন তো আর লাল ঝান্ডা দেখাই যায় না।