পুবের কলম প্রতিবেদক: দুনিয়া আধুনিক হচ্ছে,কিন্তু অনাচার,নারীদের উপর নির্যাতন দিনদিন বেড়েই চলেছে। নারী অধিকার প্রত্যেকটা লঙ্ঘিত হচ্ছে। এটা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। আর তার জন্য সচেতন হতে হবে নারী সমাজকেই। রবিবার কলকাতার পার্ক সার্কাস ময়দানের রাজ্য জামাআতে ইসলামি হিন্দের মহিলা সমাবেশ থেকে এমনই বার্তা দিলেন বিশিষ্টরা।
এ দিন মূলত ‘চাই নারীর অধিকার ও সুরক্ষা’ শীর্ষক বিষয়কে সামনে রেখেই জামাআতে ইসলামি হিন্দের পশ্চিমবঙ্গ শাখা সমাবেশ আয়োজন করেছিল। এই সমাবেশে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা থেকে জামাআতের হাজার হাজার মহিলা কর্মী উপস্থিত হন। তাঁদের দাবির সপক্ষে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্টরা। মহিলাদের অনেকেই নানান স্লোগান সম্বলিত পোস্টার হাতে নিয়ে সমাবেশস্থলের হাজির হন। কারও হাতের পোস্টারে লেখা ছিল ‘হিজাব আমাদের অধিকার’, কারও, বা প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘উই কর্ভাড আওয়ার হেড,বাট নট আওয়ার ব্রেন’। এ দিকে চলতে থাকে বিশিষ্টদের বক্তব্য,আর মাঝে মাঝে সংগীতও পরিবেশন করেন মেয়েরা।
এ দিনের সমাবেশে ছিলেন জামাআতের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি এস আমিনুল হাসান, রাজ্য সভাপতি আবদুর রফিক, সর্বভারতীয় মহিলা শাখার সম্পাদক আতিয়া সিদ্দিকা, পুবের কলম-এর সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান, ক্বারী ফজলুর রহমান প্রমুখ।
রেড রোডের ইমামে ঈদাইন ক্বারী ফজলুর রহমান তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে নারীর অধিকার ও ইসলাম নিয়ে আলোচনা করেন। হিজাব নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘এটা নিছক ধর্মীয় বিষয় নয়, ভারতীয় সংস্কৃতিতেহিজাব রয়েছে। আজও রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলিতে মেয়েরা পরû-পুরুষের সামনে এলে মুখমণ্ডল ঢেকে রাখেন। ইসলাম মেয়েদের ইজ্জত-আব্রু রক্ষার কথা বলে।’
বর্তমানে ভারত-সহ গোটা বিশ্বেই মেয়েদের উপর নির্যাতন বাড়ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যেন জাহেলিয়াত-এর যুগ ফিরে এসেছে।’
অন্যদিকে জামাআতের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস আমিনুল হাসান কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বেটি বাঁচাও’ প্রকল্প নিয়ে সরব হন। তিনি মেয়েদের উপর ঘটে চলা নির্যাতনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
আহমদ হাসান ইমরান ইসলাম ও নারীর অধিকার নিয়ে বক্তব্য পেশ করেন। তিনি বলেন, ১৪০০ বছর আগেই পিতা-মাতার সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার দিয়েছে ইসলাম। জুলুমের বিরুদ্ধে শান্তির পয়গাম নিয়ে এসেছে ইসলাম। আর এই সংগ্রামে নারীদের ভূমিকা ছিল অনন্য। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমরা নার্সিংয়ের জন্য ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গলের কথা সবাই জানি, কিন্তু মনে রাখতে হবে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত মানুষের সেবার জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন রুফাইদা (রা)।
প্রথম ইসলাম কবুলকারী মা খাদিজা, ইসলামের জন্য মা আয়েশা, ফাতেমার ভূমিকা আমরা ভুলতে পারি না। ইসলামি সভ্যতায় নারীরা বিরাট ভূমিকা পালন করেছে।
ইমরানের কথায়, ‘ইসলাম নারী ও পুরুষের মধ্যে প্রভেদ নেই।’ তিনি আরও বলেন, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার অবশ্যই সমান, তাই বলে তারা একই কাজ করতে পারেন না। আসলে প্রত্যেকের কাজ আলাদা। নারী-পুরুষ আল্লাহ্র কাছে সমান। তাঁরা নেকি বা গুনাহ্ যাই করুক না কেন, আল্লাহর কাছে সকলের জন্যেই সমান বিচার হবে। এরপরই তিনি বর্তমান পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, নারীদের সম্মান দেওয়ার নাম নিয়ে যৌন পণ্য হিসাবে ভাবা হচ্ছে।
অন্যদিকে, আতিয়া সিদ্দিকা নারীর অধিকার নিয়ে সোচ্চার হন। নারী স্বাধীনতার নামে বেলেল্লাপনা ও নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসাবে প্রদর্শন নিয়ে তিনি সরব হন। হাথরস থেকে হাঁসখালি, বিলকিস বানু থেকে নির্ভয়া, নানান ইস্যুতে তিনি সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেন। রাজ্য জামাআতের আবদুর রফিক ও অন্যান্য বক্তারাও দেশের সমস্ত নারী ও শিশুর সুরক্ষায় আইনকে কঠোরভাবে প্রয়োগের পক্ষে সওয়াল করেন। একইসঙ্গে ইসলাম ও নারীর অধিকার নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্টরা। অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন ছোটন দাস, নাসিম আলি হিজাজী, মাওলানা তাহেরুল হক, নুরুদ্দিন শাহ, রহমত আলি খান, রেহানা সুলতানার প্রমুখ।