আহমদ আবদুল্লাহ: ৩০ নভেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলের সময়সীমা খতম হয়ে গেল। দেখা যাচ্ছে যে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি এবং আরও কিছু বিরোধী দল একজনও প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। আর বাংলাদেশে ৭ জানুয়ারি ২০২৪ নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে, সেই নির্বাচনে একজনও বিরোধী দল প্রার্থী নেই। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হবে না।
নির্বাচন কমিশনের সচিব মুহাম্মদ জাহাঙ্গির আলম বলেন, তপশিল (নির্ঘণ্ট) পুনর্নির্ধারণের আর কোনও সম্ভাবনা বা সুযোগ নেই। যারা মনোনয়পত্র দাখিল করেছেন তাঁদের মনোনয়নপত্র ঝাড়াই-বাছাই করার পর সংশ্লিষ্টরাই নির্বাচনে দাঁড়াবেন।
উল্লেখ্য, বিএনপি-সহ বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলি নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক বা জাতীয় সরকার চেয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে রাজি হননি। তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন তপশিল ঘোষণা করে দেয়।
আর যেহেতু বাংলাদেশ নির্বাচনে কোনও বিরোধী দল থাকল না, তাই এই ভোটে শেখ হাসিনার নৌকা তরতরিয়ে পার হয়ে যে গণভবনের ঘাটে তরী বাঁধবে তাতে আর কারোই সন্দেহ নেই।
এখন শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ খুবই মুশকিলে পড়েছে। যদি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পার্লামেন্টে বিরোধীই না থাকল, তাহলে তো বিশ্বের চোখে হেয় হতে হবে। তাই তাঁরা জোর অনুসন্ধান শুরু করেছেন কোথা থেকে বিরোধী দল কিংবা প্রার্থীকে ধরে আনা যায়। শোনা যাচ্ছে, আগের মতো এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি-ই বোধহয় ‘বিরোধী দল’-এর ভূমিকা পালন করে আওয়ামি লিগের মুখ রক্ষা করবে।
এ নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারপার্সন জি এম কাদের এবং নেত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে আওয়ামি লিগের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। এক সূত্র বলছে, জাতীয় পার্টি দাবি করেছে, তাদের জন্য নির্দিষ্ট বেশকিছু আসন আওয়ামি লিগকে ছাড়তে হবে এবং ১০টি মন্ত্রিত্ব দিতে হবে। অর্থাৎ সংসদে বিরোধী দলের আরোপিত ভূমিকা পালন করলেও তাঁদের কিন্তু মন্ত্রিত্ব চাই। আবার আওয়ামি লিগেরও চাই সংসদে বিরোধী দল। ফলে আওয়ামি লিগকে মন্ত্রিত্ব কিংবা মন্ত্রীপদের সমান বেশকিছু পদ জাতীয় পার্টিকে দিতেই হবে। মন্ত্রী, কিন্তু একইসঙ্গে বিরোধী নেতা এই তকমা দিয়ে সংসদে বিরোধী দল বানানো হচ্ছে। বিশ্বে এই ধরনের উদাহরণ বিরল না হলেও খুবই অস্বাভাবিক। কিন্তু আওয়ামি লিগ ও জাতীয় পার্টি পরস্পরের রাজনৈতিক স্বার্থে এই সোনার পাথরবাটি থেকে পানি পান করতে রাজি আছে।
বাংলাদেশের একজন দক্ষিণপন্থী রাজনীতিবিদ মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেছেন, আওয়ামি টুর্নামেন্টে কোনও বিরোধী দল নেই। তাই যে রকমই খেলুক না কেন আওয়ামি লিগই ফের ক্ষমতার শীর্ষে। হয়তো বা আরও বেশি আসন নিয়ে আওয়ামি লিগ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের দখল নেবে।
গত নির্বাচনে আওয়ামি লিগ পার্লামেন্টে সর্বমোট ৩০০টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ২৫৭টি আসন দখল করেছিল। সেবারও বিরোধীশূন্য নির্বাচনে এই বিপুল গরিষ্ঠতা পেতে তেমন কোনও অসুবিধা হয়নি। তবে ঢাকার রাজনীতির অনেক পর্যবেক্ষক বলেছেন, আওয়ামি লিগ আর একটু ভালোভাবে তাদের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন সংহত করতে পারলে তারা আরও বেশি সংখ্যক আসন জিততে পারত। ৩০০-র মধ্যে ২৫৭টিতে আওয়ামি লিগকে সীমাবদ্ধ থাকতে হত না।
তবে এবার আওয়ামি লিগ যদি ইচ্ছে করে জাতীয় পার্টিকে কয়েকটি আসন ছেড়ে না দেয়, তাহলে হয়তো তারা আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রিপল সেঞ্চুরিই করে ফেলবে!
এ দিকে বিরোধী দল বিএনপি এবং তাদের একদা সহযোগঈ জামায়াতে ইসলামি বড় আশা করে বসে আছে যে, মার্কিন ও ইউরোপীয় দেশগুলির হুঁশিয়ারিতে শেখ হাসিনা বোধহয় নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক বা জাতীয় সরকারের দাবিকে মেনে নেবেন। আর অবাধ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলি বাজিমাত করবে। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন শেখ হাসিনার অমনোনীয় মনোভাব এবং নয়াদিল্লির সমর্থনের ফলে কাত হয়ে পড়ল।
বিএনপি, জামায়াত এবং সমমনা কয়েকটি দল এখন বুঝতে পেরেছে, শেখ হাসিনার চালের কাছে তারা অসহায়। নির্বাচন পিছবে না এবং তাতে বঙ্গবন্ধু কন্যা নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা থেকেও আরও বেশি আসন হাসিল করবেন।
এ দিকে গণ্ডগোল এবং দুর্নীতির দায়ে বিচার হবে আশঙ্কায় যে বাংলাদেশিরা বিদেশে চলে গিয়েছিলেন, তারা অবস্থাদৃষ্টে দ্যাশে ফিরে আসতে শুরু করেছেন। বলা বাহুল্য বিরোধী বিএনপি বিমূঢ় ও বাকহীনভাবে বসে রয়েছে। বিএনপি একের পর এক অবরোধ ও হরতালের ঘোষণা দিয়ে চলেছে। কিন্তু মামলা ও গ্রেফতারির দ্বারা তা দমন করা আওয়ামি সরকারের জন্য জল-ভাত। তাই বাংলাদেশের এক মন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, হরতাল, অবরোধ দিয়ে কিছু হবে না। নির্বাচন হবে ৭ জানুয়ারি ২০২৪। আর আওয়ামি লিগের সরকারই গণভবনে ফের সমাসীন হবে। দু-একটা ‘সান্ত্বনা পুরস্কার’ পেতে পারে জাতীয় পার্টি।
ফলে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মহোৎসব হবে ৭ জানুয়ারি ২০২৪। আর তার জেরে লাগাতার ক্ষমতায় থাকবেন বঙ্গবন্ধু তনয়া এবং আণবিক বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়া সাহেবের ঘরনি শেখ হাসিনা।