পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ আলবেনিয়ায় সমুদ্রের ধারে ছোট্ট শহর শেংজিন।সেখানে পিজ্জারিয়া নামে ছোট একটি খাবারের দোকান আজকাল বেশ বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এই ছোট্ট রেঁস্তোরাটির সামনে দিয়ে হেঁটে গেলে নাকে আসে আফগান নানের সুগন্ধ।
দোকানটিতে পাওয়া যাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী আরও অনেক পদের খাবার। শহরটিতে আশ্রয় নেওয়া কয়েক হাজার শরণার্থীকে দেশি খাবারের স্বাদ পাইয়ে দিতে এ উদ্যোগ নিয়েছেন দুই আফগান মহিলা।
গত আগস্টে তালিবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার পর হাজার হাজার আফগানের মতো দেশ ছাড়েন হাসিবা আতাকপাল এবং নেজিনা খলিলও। আতাকপাল ছিলেন আফগানিস্তানের বৃহত্তম সংবাদ চ্যানেল টোলোনিউজের অন্যতম বিখ্যাত সাংবাদিক আর খলিল আফগান প্রদেশ ঘোরের প্রথম মহিলা প্রসিকিউটর। তালিবান জমানায় দেশ ছাড়েন দুজনেই।
হাসিবা এবং নেজিনার প্রথম দেখা হয়েছিল কাতারের একটি শরণার্থী শিবিরে
সেখান থেকে তাদের প্লেনে করে আলবেনিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। বলকান অঞ্চলের এ দেশটিতে হাজার তিনেক আফগান শরণার্থী আশ্রয় পেয়েছেন। এর মধ্যে শেংজিনে থাকছেন প্রায় ১২শ’ আফগান।
প্রিয় আফগান ভূমি থেকে থেকে অন্তত সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা এই শরণার্থীদের অনেকে বাড়ির খাবারের কথা মনে করে কষ্ট পান। তাদের এ দুঃখ দূর করতে হঠাৎ চমৎকার বুদ্ধি আসে হাসিবা নেজিনার মাথায়। আফগান খাবারের একটি রেস্তোরাঁ চালু করতে চান তারা। কিন্তু চাইলেই তো হবে না, তার জন্য জায়গা দরকার, তার আগে দরকার অর্থ- যার কোনোটাই তাদের হাতে নেই। তাহলে কি করবেন এই দুই আফগান মহিলা।
এই দুই সাহসিনীর সাহায্যে এগিয়ে আগে পিজ্জারিয়া কর্তৃপক্ষ। দুই আফগান তরুণী বলেন, আমরা তাদের কাছে আমাদের সমস্যাগুলোর কথা বললাম যে, আফগান সম্প্রদায় কীভাবে দেশি খাবার মিস করছে। আমরা আমাদের পরিকল্পনার কথা খুলে বললাম, কীভাবে একটি আফগান রান্নাঘর চালু করা যায়। শুনে তারা সঙ্গে সঙ্গেই তাদের রেস্তোরাঁর জায়গা ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে দেয়।
এখানে লবিয়া (লাল শিমের তরকারি), কাবিলি পোলাও, বোলানিস (ভাজা রুটি), বানজান বোরানি (টমেটো সস দিয়ে বেগুন) পাওয়া যায়। আর আফগানিস্তানের মতো সব খাবারই নান দিয়ে পরিবেশন করা হয়। হাসিবা এবং নেজিনা বলছেন শরনার্থী আফগানদের পাশাপাশি এখন আলবেনীয়রাও রেস্তোরাঁয় এসে আফগান খাবারের অর্ডার করছেন। সবার মুখে হাসি ফোটাতে পেরে খুশি এই আফগান তরুণীরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করেছেন। আলবেনিয়া ছাড়ার আগে পর্যন্ত এই রেস্তোরাঁ চালিয়ে নিয়ে যেতে চান ওঁরা।