পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ সরকারের নির্দেশে বন্ধ করে দেওয়া হল জম্মু-কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী জামিয়া মসজিদ। ফলে রমযান মাসের শেষ জুম্মায় শুক্রবার আজ জামিয়া মসজিদে নামায পড়তে পারলেন না লক্ষাধিক
মুসলিম।
বৃহস্পতিবার শব-ই-কদর উপলক্ষে পবিত্র রমযান মাসের ২৭ তম দিন ছিল। পবিত্র রমযান মাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হল শব-ই-কদর ও জামাতুল-বিদা। জম্মু-কাশ্মীর সরকার বৃহস্পতিবার রাতেই শ্রীনগরের ঐতিহাসিক জামিয়া মসজিদে নামায পড়ার অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ইবাদত করতে আসা বহু মানুষ ফিরে যেতে বাধ্য হয়। রমযান মাসের প্রবিত্র দিন উপলক্ষে আজ শেষ শুক্রবার আল বিদা জুম্মার নামায পড়ার জন্য জামিয়া মসজিদে জড়ো হয়ে থাকেন কয়েক হাজার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।
সরকারের এই মসজিদে নামায বন্ধের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে আঞ্চলিক দলগুলো সহ হুরিয়তের চেয়ারম্যান ও প্রধান মুফতি মিরওয়াইজ উমর ফারুক।
জামিয়া মসজিদের মুখপাত্র, তত্ত্ববধায়ক আঞ্জুমান আউকাফ বলেছেন, মসজিদটি শ্রীনগরের নাওহাটায় অবস্থিত। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সরকারি প্রতিনিধি ও পুলিশ কর্মকর্তারা বুধবার জামিয়া মসজিদ প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। সরকারি নির্দেশ জারির কথা জানিয়ে বলে দেওয়া হয় মসজিদে শব-ই-কদর এবং জুমাতুল-বিদা নামাযে অনুমতি দেওয়া হবে না। সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে পিপলস অ্যালায়েন্স ফর দ্য গুপকার ডিক্লারেশন(পিএজিডি)।
পিএজিডি মুখপাত্র, সিপিএম নেতা এম ওয়াই তারাগামি বলেন, সরকার এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্যায় করেছে। মানুষ আজ নামায পড়তে জমায়েত হয়েছিল। কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্ত তাদের নামাযে বাধা দিল। এই ধরনের সিদ্ধান্ত মানুষের ধর্মীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল।
পিএজিডি সদস্য ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রশাসনকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে৷
ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ভাইস-প্রেসিডেন্ট ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত মানুষের স্বাভাবিক কাজ ও ধর্মপালনে বাধা দিচ্ছে। ওমর আবদুল্লাহ প্রশ্ন তুলে বলেন, সরকার একদিকে দাবি করছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে, তাহলে কেন এই ঐতিহ্যশালী মসজিদে নামায বন্ধ করে দেওয়া হল?
ওমর আবদুল্লাহ আরও সংযোজন করে বলেন, সরকারের কথায় না, কাজেই প্রমাণ করে দেখাচ্ছে যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই। পর্যটক আগমনকে স্বাভাবিক দেখিয়ে পরিস্থিতি ঠিক আছে বলার কোনও প্রয়োজন নেই।
হুরিয়তের চেয়ারম্যান মিরওয়াইজ উমর ফারুক বলেন, ‘সরকারের পদক্ষেপ আপত্তিজনক এবং ধর্মীয় অনুশীলনের মৌলিক মানবাধিকারের বিরুদ্ধে’।
পিডিপি সভাপতি মেহবুবা মুফতি সরকারে প্রতি তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করে বলেন, উপত্যকা থেকে শুধুমাত্র যে তরুণ যুবকদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাই নয়, সরপঞ্চদেরও উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় তারা পরিবারে সঙ্গে ঈদ পালন করবে কিভাবে?
উল্লেখ্য, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা প্রত্যাহার করার পর, ২০১৯ সাল আগস্ট মাসে জামা মসজিদটি একাধিকবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর করোনা অতিমারির কারণে মসজিদটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর পুনরায় চলতি বছরের মার্চ মাসে মসজিদটি খুলে দেওয়া হয়েছিল। ফের আজ বন্ধ করে দেওয়া হল।