অর্পিতা লাহিড়ীঃ একমাথা কোঁকড়ানো চুল, নীল চোখের মণি, ফুটফুটে ২ বছুরে টাকে যে দেখেন আদর করতে চান। বাড়িতে আত্মীয়স্বজন এলেই ছোট্ট শিশুটির নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার প্রবনতা। কারুর কাছে যেতে চায়না, পার্কে নিয়ে গেলেও একা একা থাকে, ঘরের কোন তার সবচেয়ে প্রিয়।মা- বাবা কথা বললেন শিশু চিকিৎসকের সঙ্গে। চিকিৎসক বাচ্চাটিকে পরীক্ষা করে অভিভাবককে জানালেন তাঁদের সন্তান অটিজমে আক্রান্ত।
দিশেহারা মা- বাবাকে ভরসা দিয়ে ডাক্তারবাবু বললেন সঠিক চিকিৎসা হলে সেও সমাজের একজন হয়ে উঠবে। দরকার শুধু ধৈর্য আর ভালোবাসা।
আজ ২ রা এপ্রিল বিশ্ব অটিজম দিবস। কিন্তু কি এই অটিজম। অটিস্টিক শিশুর লক্ষণই বা কি।
অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (এএসডি)। এটি হল এক জটিল নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার। আমাদের দেশ তথা রাজ্যে একখনও সেভাবে অটিস্টিকস শিশুদের নিয়ে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি।
শহর কলকাতায় হাতেগোনা কয়েকটি স্পেশাল স্কুল আছে যেখানে এই শিশুদের পড়াশোনা চলে।
চিকিৎসকরা বলছেন শিশু অটিস্টিকস এটা শোনার পরেই অধিকাংশ অভিভাবকদের মধ্যে একটা হীনমন্যতা জন্ম নেয়। সেই সঙ্গে আছে প্রতিবেশীদের কটাক্ষ ” জানিস তো অমুকের বাড়ির বাচ্চাটা না পাগল “।
এই শহরের বহু প্রখ্যাত মনোবিদ এবং স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন ” তারে জমিন পর” ছবির ঈশান অবস্তির কথা। ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত ঈশান কে সুস্থ জীবনের ঠিকানা দিয়েছিলন নিকুম্ভ স্যার। আমীর খান আর দর্শিল সাফারির অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি আজও তারে জমিন পর কে সেরা ছবির তালিকায় সবার আগে রেখেছে।
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার শুরুতে ধরা পড়লে এবং দ্রুত বাচ্চাটিকে যথাযথ চিকিৎসা দিলে তার পক্ষে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা মোটেও অসম্ভব নয়। বরং দেখা গিয়েছে, এদের বুদ্ধি অনেক বেশি। প্রচলিত পড়াশোনার পাশাপাশি এদের কিছু বিশেষ দক্ষতা থাকে।
অ্যালিস ইন দ্য ওয়ান্ডারল্যান্ড খ্যাত ল্যুই ক্যারল, চার্লস ডারউইন, শিশু সাহিত্যিক হ্যান্স অ্যান্ডারসন অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, মোৎসার্ট, আর হাল আমলের বিল গেটস, স্টিভ জোবস-সহ অনেক সফল মানুষই অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার নিয়েও খ্যাতির শিখরে পৌঁছেছেন।
সমালোচনা নয়, ওদের ভালোবাসুন। দেখা গিয়েছে অনেক অটিস্টিক শিশু খুব ভালো গান করে, নাচে, ইন্সট্রুমেন্ট বাজায়, রঙ তুলিতে জীবনের ছবি আঁকে। চিকিৎসকরা বলছেন এই সত্তাগুলোর বহিঃপ্রকাশ হলেই ওরা অনেক কৃতী আমাদের চেয়ে।
২ এপ্রিল Autism Awareness Day। পরিসংখ্যান বলছে আমাদের দেশে কমপক্ষে ৫৮ জন শিশু প্রতিবছর অটিজম ডিসওর্ডার নিয়ে জন্ম নেয়।
সামাজিক মেলামেশা করতে না চাওয়া এর প্রধান উপসর্গ। কি করে বুঝবেন আপনার সন্তান অটিস্টিকস কিনা। চিকিৎসকরা বলছেন দেরীতে কথা বলতে শেখা, চোখে চোখ না রেখে কথা বলার প্রবনতা, মিশতে না চাওয়া, একই জিনিসপত্রের ওপর অত্যধিক আকর্ষণ। মনোবিদরা বলছেন একই পোশাক, একই খেলনা, একই ধরনের খাবার এদের পছন্দ বা বলা ভালো অটিস্টিকসদের এটা প্রবনতা। এর থেকে বিচ্যুতি ঘটলেই সে অনর্থ ঘটাবে। শিশুর মধ্যে এই ধরনের অভ্যাস দেখা দিলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
আইনস্টাইন কথা বলতে শিখেছিলেন চার বছর বয়সে, বাড়ির লোকেরা ধরেই নিয়েছিলেন সে জড়বুদ্ধি, মূক হবে। স্টিভ জোবস, বিল গেটস এই তালিকায় রয়েছেন যারা অটিজম ডিসওর্ডার নিয়েই পৃথিবীর আলো দেখলেও, দুনিয়াকে বদলে দেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।তাই উপেক্ষা নয়, ভালোবাসা এবং যথাযথ চিকিৎসা পেলে অটিস্টিকস সন্তানও পরিবারের গর্ব হয়ে উঠতে পারে।