পুবের কলম প্রতিবেদক: ফের ইডির তলব ঘাটালের সাংসদ তথা অভিনেতা দীপক অধিকারী ওরফে দেবকে। সূত্রের খবর, চলতি মাসের ২১ তারিখ আর্থিক তছরূপ সংক্রান্ত একটি মামলায় দিল্লির এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট দপ্তরে দেবকে তলব করা হয়েছে। তবে শুধু দেব নয়, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নজরে তৃণমূলের পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিকও রয়েছেন। সূত্রের খবর, ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট তলব করেছে উত্তম বারিককে। অর্থাৎ, একদিকে তৃণমূলের সাংসদ দীপক অধিকারী ওরফে দেবকে ইডির তলব, অন্যদিকে শাসক-বিধায়ক উত্তম বারিককে আইটির তলব। শাসক দল তৃণমূলের মতে এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। রয়েছে প্রতিহিংসার রাজনীতি। উল্লেখ্য, এর আগে, গরু পাচার মামলায় দেব-এনামূল যোগের অভিযোগে ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কয়েক ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যে বলে জানিয়ে দেব বলেছিলেন, তাঁকে আর ডাকবে বলে মনে হয় না। তারপর আবার ইডির তলব।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘এটা প্রতিহিংসার রাজনীতি। দেবকে নানা ভাবে ভয় দেখানো হচ্ছিল, চাপ দেওয়া হচ্ছিল। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বার্তা পাঠানো হচ্ছিল। তাঁকে ইডির নোটিশ দিয়ে বিব্রত ও হেনস্থা করা হচ্ছিল। দেব মাথা নিছু করেন নি। দেব জানিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসে আছেন এবং দিল্লিতে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে ঘাটাল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তারপরেই, ইডির এই নোটিশ প্রমাণ করে দেয় যে, এজেন্সিকে বিজেপি শাসানোর কাজে ব্যবহার করছে, প্রতিহিংসার কাজে ব্যবহার করছে। যারা যারা মাথা অবনত করছেন না তাঁদের বাড়িতে ইডি, সিবিআই, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নোটিশ পাঠানো হচ্ছে।এটা বিজেপির পলিসি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে টার্গেট করেছে, তাঁকে, তাঁর বাবা-মাকে, তাঁর স্ত্রীকে, তাঁর শ্যালিকাকে, তাঁর আইনজীবীকে নোটিশে নোটিশে জেরবার করে দেওয়া হচ্ছে। এবার দলের অন্যান্য নেতাদের টার্গেট করা হচ্ছে। লোকসভা ভোটের আগে এজেন্সি দিয়ে এই হুমকি বাজির রাজনীতি করা হচ্ছে।’
কুণালের মতে, এটাই প্রতিহিংসার রাজনীতি। দেবকে যদি বিজেপিতে নিয়ে গিয়ে বিজেপির প্রার্থী করে দেওয়া হত, নোটিশ আসত না। দেব তৃণমূলে রয়ে গিয়েছে তাই নোটিশ। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি। শুধু তাই নয়, কূণাল ঘোষ আরও জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে অগ্রাহ্য করে ওইদিনই দেবকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। ওই দিনটিকে প্রতিহিংসার রাজনীতি দিয়ে কলুষিত করছে বিজেপি। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি।
একইসঙ্গে সন্দেশখালি প্রসঙ্গে অগ্নিমিত্রা পালের একটি টেলিফোনিক বার্তা সাংবাদিক সম্মেলনে ফাঁস করে কুণাল ঘোষ জানান, একটা চক্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেমন অগ্নিমিত্রা পাল বলছিলেন, একটা চক্রান্ত ওনাদের তৈরি করতে হবে। সন্দেশখালিতে সিপিএম বিজেপি কিছু ঘটনা অর্গানাইজ করে ঘটিয়েছে। যদি কোনও ব্যক্তি কোনও দুর্ব্যবহার করে থাকেন, অন্যায় করে থাকেন পুলিশ প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে। সেখানে গণ নারী নির্যাতনের যে ছবি তোলা হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। যদি দীর্ঘদিন নারী নির্যাতন হয়ে থাকে তবে সিপিএমের নেতা নিরাপদ সর্দার, বিজেপির নেতা বিকাশ সিং তারা এতদিন একটাও ঘটনার কথা বলেননি কেন?
প্রসঙ্গত, বিগত কয়েকদিন ধরে বারবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন তৃণমূলের তারকা সাংসদ দেব। তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান, রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে কম জল্পনা চলেনি। সেইসব জল্পনাতে ঘৃতাহুতির কাজ করেছিল দেবের একাধিক মন্তব্য, সোশ্যাল মিডিয়ার স্টেটাস। জল্পনা শুরু হয়েছিল, দেব এবার তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছেন। তবে সেই সব জল্পনা কল্পনায় জল ফেলে গত সপ্তাহে ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে দিয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট বৈঠক করেন দেব। সেই বৈঠক সেরে কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতেও যান দেব। এরপর দেব নিজেই বলেন, তিনি রাজনীতি ছাড়তে চাইলেও রাজনীতি তাঁকে ছাড়বে না। সোমবার আরামবাগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভাসঙ্গী হিসাবেও দেখা যায় ঘাটালের সাংসদ দেবকে। সেই মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, দেব আবারও ঘাটালের প্রার্থী হচ্ছেন। জানিয়ে দেন, দেব তাঁর কাছে ‘চ্যাম্পিয়ন’। মমতার সেই চ্যাম্পিয়নকেই এবার তলব কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির।