পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ বাবরি মসজিদ ভেঙে সেখানে হচ্ছে বিরাট রাম মন্দির। নিশানায় রয়েছে জ্ঞানভাপী মসজিদও। জ্ঞানভাপী নিয়ে মামলাও চলেছে। আর এবার উগ্রবাদীদের নিশানায় কর্নাটকের শ্রীরঙ্গপত্তনমের জামিয়া মসজিদ। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল এই ঐতিহাসিক মসজিদটি টিপু সুলতান তৈরি করেছিলেন। ফলে মসজিদটির ঐতিহাসিক গুরুত্বও যথেষ্ট।
এই মসজিদে একাধিকবার টিপু সুলতান নিজে নামাযও পড়েছিলেন বলে শোনা যায়। সেই ঐতিহাসিক মসজিদটিও এবার ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ছক কষা হচ্ছে। সেই ১৯৯২ সালে উগ্র ধর্মান্ধরা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল সম্রাট বাবরের তৈরি বাবরি মসজিদ। এবার তাদের টার্গেট টিপু সুলতানের জামিয়া মসজিদ।
সোমবার ছিল সংকীর্তন যাত্রা। সেই যাত্রায় অংশ নিয়েছিল একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। অভিযোগ, সংকীর্তন যাত্রায় অংশগ্রহণকারী কথিত হনুমান ভক্তরা (মালাধারী নামেও পরিচিত) জোর করে জামিয়া মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করে। সঙ্গেসঙ্গে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যদিও সংকীর্তন যাত্রাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে আশংকা করে ঘটনাস্থলে আগে থেকেই ২ হাজারের বেশি পুলিশকর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল। তারাই মূলত ব্যারিকেড করে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মান্ড্য জেলার শ্রীরঙ্গপত্তনমে এই সংকীর্তন যাত্রার আয়োজন করেছিল হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘জাগরণ বৈদিক’। শ্রীরঙ্গপত্তনমে নিমিশম্ভা মন্দিরের কাছে হনুমান মন্দির থেকে যাত্রা শুরু হয়।মহিশূর, রামনাগড়া, মাদ্দুর, কে আর পেট, পাণ্ডবপুরা ও অন্যান্য এলাকা থেকে মালাধারীরা হনুমান মন্দিরের প্রবেশদ্বারের কাছে জড়ো হয়। ধর্মীয় আচার পালনের পর হাতে গেরুয়া পতাকা নিয়ে শুরু করে সংকীর্তন যাত্রা।
মসজিদের কাছে পৌঁছাতেই তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। গলা ফাটিয়ে স্লোগান দেয়, ‘আমরা ভগবান হনুমানের পায়ের নীচে দাঁড়িয়ে শপথ নিচ্ছি এখানেই হনুমান মন্দির নির্মাণ হবে। অযোধ্যায় হচ্ছে রামমন্দির, শ্রীরঙ্গপত্তনায় হবে হনুমান মন্দির।’
তাদের সেই উল্লাস ও হুমকির ভিডিয়ো ট্যুইটারেও ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই আবার এক উগ্রবাদী যুবক পাশের এক মুসলিম পরিবারের বাড়ির ছাদে উঠে পড়ে। সেখানে সবুজ পাতাকা টাঙানো ছিল। ওই যুবক সেই পতাকা খুলে দিয়ে সেখানে গেরুয়া পতাকা টাঙিয়ে দেয়।
মান্ড্য জেলার পুলিশ সুপার ইয়াতিশ এন সাংবাদিকদের বলেন, আইন-শৃঙ্খলা জনিত যে কোনও সমস্যা এড়াতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। ইস্যুটি সংবেদনশীল হওয়ায় শ্রীরঙ্গপত্তনম কঠোর পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংবেদনশীল ও উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মদ বিক্রিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারিতে চিক্কামগালুরু কালী মঠের প্রধান ঋষি কুমার মসজিদটি ভেঙে ফেলে সেখানে মন্দির গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন।
এই ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য করার জন্য পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারও করেছিল। যদিও তাঁর মন্তব্যের পরই চলতি বছরের মে মাসে ধর্মান্ধ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির তরফে মান্ড্য জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করে মসজিদে পুজোর অনুমতি চাওয়া হয়।
পাশাপাশি তারা জামিয়া মসজিদ ভেঙে হনুমান মন্দির নির্মাণের অনুমতি চায়। কিন্তু, সেই অনুমতি না মেলায় চলতি বছরের জুনেই আবার এই উগ্রবাদীরা কিরাঙ্গুর জংশনে বিরাট জমায়েত করেছিল জামিয়া মসজিদ পর্যন্ত মিছিল করার জন্য।
তাদের দাবি, হনুমান মন্দির ভেঙে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল। তাই সেখানে তাদের পুজো করার অনুমতি দিতে হবে। না হলে তারা জোর করে মসজিদে ঢুকে পুজোপাঠ শুরু করে দেবে। যদিও পুলিশ-প্রশাসনের বাধায় সেইসময় তারা তাদের লক্ষ্যপূরণ করতে পারেনি। তারপর এদিন সংকীর্তন যাত্রার মাধ্যমে ফের উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করে তারা।
উল্লেখ্য, জামিয়া মসজিদটি ১৭৮২ সালে মহিশূরের শাসক টিপু সুলতান নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই শ্রীরঙ্গপত্তনম ছিল টিপু সুলতানের রাজধানী। এখানে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন টিপু, যা তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ নামে ইতিহাসে পরিচিত।