পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ মহাত্মা গান্ধিকে নিয়ে নানা প্রকল্প চালু করে ভিন্ন বার্তা দিতে চাইছে ডানপন্থী রাজনীতিতে বিশ্বাসী বিজেপি৷ তবে এর মাধ্যমে মোদি সরকার গান্ধিনীতি ও আদর্শকেও তুচ্ছ করতে শুরু করেছে তারা৷ সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক স্বপ্নের প্রকল্পে হাত দিয়েছেন৷ ১৯১৭ সালে মহাত্মা গান্ধি প্রতিষ্ঠিত শতাব্দী প্রাচীন হরিজন আশ্রমকে নর্মদা নদীর ধারের সর্দার প্যাটেলের ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটির’ মতো বিশ্বমানের পর্যটনস্থলে রূপান্তরিত করাই তার ‘স্বপ্নের প্রকল্প’৷ আর এরই অংশ হিসাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গুজরাত সরকারকে আশ্রম প্রাঙ্গণ থেকে পাঁচ প্রজন্ম ধরে বসবাসরত ২০০-এর বেশি হরিজন পরিবারকে উচ্ছেদ করার নির্দেশ দিয়েছেন। গান্ধিজি বেঁচে থাকলে কি এটা মেনে নিতেন? অবশ্যই না৷ গত সপ্তাহে তার রাজ্য সফরকালে অমিত শাহ মোদির ‘স্বপ্নের প্রকল্প’ হিসাবে আশ্রম প্রাঙ্গণকে উন্নত করার জন্য হরিজন পরিবারগুলিকে উচ্ছেদ করার উপায় নিয়ে আলোচনা করতে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিষয়টি গড়িয়ে গিয়েছে অনেক দূরই৷
ওই বৈঠকের পরে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান সচিব কে কৈলাসনাথন আশ্রমে গিয়েছিলেন এবং ৫ প্রজন্ম ধরে বসবাস করছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে লোভনীয় প্রস্তাব দিয়েছেন৷ ঘর খালি করতে রাজি হলে তারা বিকল্প আবাস বা সরকারের ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৬০ লক্ষ টাকা পাবেন বলে হরিজনদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। যারা সম্মতি পত্রে স্বাক্ষর করবেন তাদের অগ্রিম ২০ লক্ষ টাকা এবং জায়গা খালি করার পরে বাকি ৪০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। হরিজন পরিবারগুলি সবরমতী আশ্রম প্রাঙ্গণের সামনের কোয়ার্টারে বসবাস করছেন, যেখানে একটি যাদুঘর, গান্ধিজির বাসভবন ‘হৃদয়কুঞ্জ’ এবং আচার্য বিনোবা ভাবে, মীরাবেন এবং অন্যান্যদের কোয়ার্টার ছিল৷ তাঁর প্রধান সচিব মহাদেব দেশাই, কাকা সাহেব কালেলকর, কিশোরলাল মাশরওয়ালা এবং পণ্ডিত খাড়েসহ গান্ধিজির অন্যান্য শিষ্যরা তাদের পরিবারের সঙ্গে আবাসিক কোয়ার্টারে বাস করতেন৷
রাজ্য সরকার আই কে প্যাটেলকে (যিনি নর্মদা নদীর সরদার সরোবর বাঁধের কাছে স্ট্যাচু অফ ইউনিটি প্রকল্পের তত্ত্বাবধান করেছিলেন) এই প্রাঙ্গণটিকে একটি ‘বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র’ হিসাবে রূপান্তর প্রকল্পের কার্যনির্বাহী আধিকারিক হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। স্থপতি বিমল প্যাটেলকে গান্ধি আশ্রম প্রাঙ্গণের ‘আধুনিকীকরণের’ বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রস্তুত করার জন্য বলা হয়েছে। বিস্তীর্ণ গান্ধি আশ্রম ক্যাম্পাসে জমি ও বিল্ডিংগুলিতে বিভিন্ন গঠনমূলক কর্মসূচির জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রায় ৫০টি পাবলিক ট্রাস্ট রয়েছে। এর মধ্যে হরিজন সেবক সংঘ, সাফাই বিদ্যালয়, খাদি এবং গ্রামোদ্যোগ ট্রাস্ট এবং সবরমতী আশ্রম সংরক্ষণ ট্রাস্ট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।