শুভজিৎ দেবনাথ, ডুয়ার্স: সাজগোজ করিয়েও পুজোতে বসানো হলো না কিরণরাজকে। শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হলো পিলখানাতে। ঘটনায় চাঞ্চল্য ডুয়ার্স জুড়ে।
কি ভাবছেন, কে এই “কিরণরাজ”?
“কিরণরাজ” হলো ডুয়ার্সের গরুমারা জাতীয় উদ্যানের বন দফতরের পোষ্য কুনকি হাতি।
ডুয়ার্সের গরুমারা জাতীয় উদ্যানের ধূপঝোড়ায় সোমবার বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে অন্যান্য জায়গায় মতন হাতি পুজোর আয়োজন করা হয়।
গরুমারা অভয়ারণ্যের অন্তর্গত এদিন ২৯ টি কুনকি হাতিকে পুজো দেওয়া হয়। বিশ্বকর্মার বাহন হাতি তাই প্রত্যেক বছর এই দিনটিতে জ্যান্ত হাতি পূজোর আয়োজন করা হয় বনদপ্তরের তরফে। এদিন সেই পুজোর আগ মুহূর্তে যখন কুনকি হাতিদের সাজানো হচ্ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে সেখানে পৌঁছায় পশু চিকিৎসক শ্বেতা মন্ডল ও তার সহকর্মীরা। আচমকাই তারা সেখানে ছবি তুলতে শুরু করে। সেই সময় পশু চিকিৎসক শ্বেতা মন্ডল হাতির কাছে গিয়ে দেখতে থাকে। সেই সময় পোষ্য হাতির হামলার মুখে পড়েন পশু চিকিৎসক। হাতির শুরের ধাক্কায় হুমড়ি পখেয়ে পড়লেন মাটিতে, বরাত জোরে প্রাণ বাঁচল চিকিৎসক। ঘটনাটি ঘটেছে মেটলি ব্লকের ধুপঝোরা এলাকায়।
হাতির পুজোর মধ্যে ছন্দপতন। পোষা হাতির হামলায় অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন প্রাণী চিকিৎসক। পুজো না দিয়ে তাকে শাস্তি স্বরূপ শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হলো পিলখানাতে। গরুমারা জাতীয় উদ্যানের ধুপঝোরা হাতি পিলখানায় হাতি পুজোর প্রস্তুতির মধ্যে এই ঘটনায় হতবাক উপস্থিত বন কর্মী,বনাধিকারিক থেকে নিয়ে উপস্থিত পর্যটকেরাও।
এদিন দুপুরে পুজো শুরুর কিছুক্ষণ আগে হাতিদের সাজানো হচ্ছিল সেই সময় প্রানী চিকিৎসক শ্বেতা মন্ডল বন দফতরের কুনকি হাতি কিরণরাজকে আদর করতে গেলে আচমকা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সে। তেড়ে আসে শুর দিয়ে হামলা চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। এরপর তড়িঘড়ি বরফ এনে সেই পশু চিকিৎসকের থুতনিতে লাগানো হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয় সেখানেই। তবে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রাণহানির মত ঘটনা ঘটতে পারতো বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। এরপর ধুপঝোরাতে থাকা ছয়টি হাতির মধ্যে পাঁচটিকে আনা হলেও শাস্তি স্বরূপ পিলখানাতেই শিকল বেঁধেই রাখা হয়। বাকি হাতিদের পুজো এবং খাওয়ানো হলেও তাকে কিছুটা হলেও মন ভার সেই গজরাজের। এদিকে এদিনের এই ঘটনা নিয়ে রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। গোটা ঘটনা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন বন কর্তারা। যদিও ধূপঝোরার এক বনকর্মী জানান, বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। আশঙ্কায় পড়েছেন বনকর্মীরা। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি। পুজো উপলক্ষে প্রচুর মানুষের সেখানে ভিড় ছিল দুর্ঘটনা ঘটনার আশঙ্কার জন্যই গজরাজ কিরণকে আর সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়নি।
যদিও এ বিষয়ে পশু চিকিৎসক শ্বেতা বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বললে গেলে তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। ধূপঝোরারা বিট অফিসার শুনিল চন্দ্র বারুই বলেন, “ এই সময় হাতিরা একটু মত্ত থাকে। সেই কারণেই একটু শুর নাড়িয়ে ছিলো। তবে তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বড়সড় আঘাত ও লাগেনি বলেই তিনি দাবি করেন”।
যদিও অন্যান্য বন কর্মীরা বলেন তিনি হুমড়ি খেয়ে পড়ে গিয়েছিলেন মাটিতে। তার থুতনিতে আঘাত লেগেছে। বড়সড় প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারত।