ব্রাসেলস, ১১ জুলাই: ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিকা টাউনে চালানো গণহত্যা রুখতে ইউরোপের ব্যর্থতার কথা প্রকাশ্যে মেনে নিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ আধিকারিকগণ। ইইউ বিদেশনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বরেল ও কমিশনার অলিভার ভারহেলি স্রেব্রেনিকা গণহত্যার ২৬তম বার্ষিকীর শোকের আবহে এক বিবৃতিতে বলেন, ’স্রেব্রেনিকায় যা হয়েছিল সেটিকে মেনে নিয়ে পশ্চিম বলকান অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতাদের উদাহরণ তৈরি করতে হবে। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে পুনর্মিলনের পথে হাঁটতে হবে এবং বিদ্বেষের শিকড়কে উপড়ে ফেলতে হবে যা থেকে গণহত্যা চলেছিল।’ তাঁরা আরও বলেন, ’গণহত্যাকে অস্বীকার ও যুদ্ধাপরাধীদের মহিমান্বিত করার মতো কোনও স্থান নেই এই বিশ্বে যা ইউরোপীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী। ইতিহাসকে পুনরায় লেখার চেষ্টাও অগ্রহণযোগ্য।’ বসনিয়ায় ৮ হাজার মুসলিমকে হত্যার জন্য দায়ী অপরাধীদের খুঁজে বের করতে এবং গণহত্যায় নিহতদের পরিবারের সদস্যদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় আরও বেশি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক আদালত প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন ইইউয়ের প্রতিনিধিরা। ইউরোপের সর্বোচ্চ সংস্থার বিবৃতিতে জানানো হয়, ’যাদের পদ্ধতিগত ও ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হয়েছিল তাদের স্মরণের সবচেয়ে ভালো উপায় হল ন্যায় নিশ্চিত করে একটি ভালো সমাজ গড়ে তোলা।’ আরও বলা হয়, ’কোনও দায়মুক্তির জায়গা নেই, গণহত্যা হল গণহত্যাই, তা সে স্রেব্রেনিকায় হোক বা অন্যত্র। শান্তি প্রতিষ্ঠা ন্যায়বিচারের মাধ্যমেই সম্ভব।’ বসনিয়ার গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নজিরবিহীন এই মানবিক বিবৃতিকে অনেকেই সমর্থন করে প্রশংসা করেছেন। এই গণহত্যার ২৬তম বার্ষিকীতে ইইউ নেতারা বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় সহাবস্থান, ন্যায় ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করে জানিয়েছেন, ইইউ চায় না ভবিষ্যতে দেশটিতে আর কোনও সংঘর্ষ বা সহিংসতার ঘটনা ঘটুক।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সালের জুলাইয়ে সার্ব বাহিনীর হামলায় ৮ হাজার বসনীয় মুসলিম নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ড ডাচ শান্তিরক্ষী বাহিনীর চোখের সামনেই চলে। সার্ব বাহিনী মূলত মুসলিমদের হত্যা করে ও তাদের জমিজায়গা থেকে উৎখাত করে ক্রোটদের জন্য স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল। ১৯৯৩ সালে রাষ্ট্রসংঘ স্রেব্রেনিকাকে বসবাসের জন্য নিরাপদ জায়গা হিসাবে উল্লেখ করলেও মানবতাবিরোধী যুদ্ধে লিপ্ত হয় সার্ব সেনা। সার্ব জেনারেল রাটকো ম্লাদিচের নির্দেশে নিরীহ মানুষদের রক্তের বন্যা বয়ে যায় স্রেব্রেনিকায়। টাউনটিতে ২ হাজার মুসলিমকে গণহারে খুন করা হয়, এরপর জঙ্গলের ’ডেথ রোড’ ধরে যারা পালানোর চেষ্টা করছিলেন তাদের মধ্যে অন্তত ৬ হাজার জনকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। সেই থেকে বসনিয়ার ৫৭০টিরও বেশি এলাকায় গণকবরের খোঁজ মিলেছে যেগুলিকে বিভিন্ন সময়ে দাফন করা হয়েছে পোটোকারির গোরস্থানে। ২০০৭ সালে হেগের আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত প্রথমবারের মতো রায়ে জানায়, স্রেব্রেনিকায় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। চলতি বছরের ৮ জুন সার্ব জেনারেল রাটকো ম্লাদিচকেও যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে আদালত। এতে খানিক স্বস্তি পান ন্যায়প্রত্যাশীরা।