পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: শেষ মুহূর্তে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে বড় ট্যুইস্ট। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে ইস্তফা দিতেই জল্পনা ছড়ায়, বিজেপির দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ফের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন। আর বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের নেতা একনাথ শিন্ডে হচ্ছেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী।
একটা সময় প্রায় সবক’টি সংবাদমাধ্যম কার্যত ‘ব্রেকিং নিউজ’ দেখাতে শুরু করে যে, ফড়নবিশই নতুন মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন। আর শিন্ডে উপ-মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, ততক্ষণে শিন্ডে-ফড়নবিশ পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজভবনে রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারির কাছে। রাজ্যপাল তাঁদের মিষ্টিমুখ করান। সেখানে তাঁরা সরকার গড়ার দাবি জানান। তাঁদের দাবি, তাঁদের পক্ষে ১৭০ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। তখন আর কে জানত যে, মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে আরও বড় ট্যুইস্ট অপেক্ষা করে রয়েছে। বৃহস্পতিবার শিন্ডে গোয়া থেকে মুম্বইতে ফেরার পরই সোজা চলে যান ফড়নবিশের বাড়িতে। বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের মধ্যে কথা হয়। তারপর চলে যান রাজ্যপালের কাছে সরকার গড়ার দাবি জানাতে। ততক্ষণও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চর্চায় ছিল ফড়নবিশের নাম। পরেû সাংবাদিক সম্মেলনে শিন্ডেকে পাশে বসিয়ে ফড়নবিশ ঘোষণা করেন, শিন্ডেই হচ্ছেন মহারাষ্ট্রের নতুন মুখ্যমন্ত্রী। ফড়নবিশের মুখ থেকে এই ঘোষণা শুনে সেখানে উপস্থিত অনেকেই হকচকিয়ে যান।
স্পষ্ট হয়ে যায়, বিজেপির সঙ্গে চূড়ান্ত পর্যায়ে দরকষাকষি করে তবেই এসেছেন শিন্ডে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নাম ঘোষণার পর শিন্ডে বলেন, ‘বালাসাহবের হিন্দুত্বের কথা ভেবে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের সঙ্গে ৫০ জন বিধায়ক রয়েছেন।’
এরপরই ফড়নবিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বিজেপির ১২০ জন বিধায়ক রয়েছে। তারপরও মুখ্যমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেননি ফড়নবিশ। ওঁর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। একইসঙ্গে আমি প্রধানমন্ত্রী ও অমিত শাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহারাষ্ট্রের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শিন্ডে। মহারাষ্ট্র বিধানসভায় মোট আসন ২৮৭টি। ম্যাজিক ফিগার ১৪৪। এই মুহূর্তে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ১০৬। শিন্ডে শিবিরের দাবি, তাদের সঙ্গে রয়েছে ৩৯ জন বিধায়ক। ফলে বিজেপি ও শিন্ডে শিবির মিলিয়ে বিধায়ক সংখ্যা ম্যাজিক ফিগার পার করে হচ্ছে ১৪৫। এ ছাড়াও আরও ২২ বিধায়কের সমর্থন তাদের সঙ্গে রয়েছে বলে দাবি শিন্ডে শিবিরের।
সূত্রের খবর, বিজেপির ২৫ জন ও শিন্ডে শিবির থেকে ১৩ জন মন্ত্রিত্ব পেতে পারেন। উদ্ধবের মন্ত্রিসভায় থাকা ৯ জন বিক্ষুব্ধ বিধায়ক ফের শপথ নেবেন। সূত্রের খবর, শিন্ডের মন্ত্রিসভায় একজন সংখ্যালঘু মুখও থাকতে পারে। আবদুল সাত্তারকে মন্ত্রী করতে পারে বিজেপি ও শিন্ডে শিবির। তবে, এ দিন গোয়া থেকে শুধু শিন্ডেই মুম্বইতে ফেরেন।
তাঁকে কেন্দ্র জেড প্লাস নিরাপত্তা দিয়েছে। তবে বাকি বিক্ষুদ্ধ বিধায়করা গোয়াতেই রয়েছেন। এ দিন শুধু শিন্ডেই শপথ নেন। বাকিরা পরে ধাপে ধাপে শপথ নেবেন বলে জানা গিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট আস্থা ভোটের নির্দেশ দেওয়ার পরই বুধবার রাতে ফেসবুক লাইভে ইস্তফার কথা ঘোষণা করেন উদ্ধব। তারপর নিজেই গাড়ি চালিয়ে রাজভবনে গিয়ে ইস্তফাপত্র দিয়ে আসেন। রাতে ছেলে আদিত্য ঠাকরেকে নিয়ে মন্দিরে পুজোও দেন। সেখানে তিনি শিবসেনা কর্মীদের উদ্দেশ্যে বার্তা দেন, বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের যেন হেনস্থা না করা হয়।
এ দিকে, মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর এখন শিবসেনার রাশও কি ধরে রাখতে পারবেন উদ্ধব? একনাথ শিন্ডে আবার দাবি করে বসেছেন, তাঁরাই প্রকৃত শিবসেনা। দলের দুই-তৃতায়াংশ বিধায়কের সমর্থন তাঁদের দিকে রয়েছে। তাই তাঁরাই শিবসেনার আসল হকদার।
অন্যদিকে, উদ্ধব ঠাকরে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি চলে গেলেও তাতে তাঁর কোনও দুঃখ নেই। তাঁর থেকে শিবসেনাকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।
শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত কটাক্ষ করে বলেছেন, বিজেপির সঙ্গে যাওয়ার জন্য শিন্ডেকে শুভেচ্ছা। দেশের মানুষ সব দেখছে। শরদ পাওয়ার আমাদের সঙ্গে রয়েছে। সবাই জানে, সরকার ফেলার পিছনে কার হাত রয়েছে। বিধানসভায় শিবসেনা গঠনমূলক বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে।