ফৌজিয়া মুহাম্মদঃ দক্ষিণ তুরস্কে কিছু দিন আগে ঘটে যাওয়া বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর, আমার ভাবনা-চিন্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি কে এবং আমার কী করতে হবে, সেজন্য এটা ছিল একটি শক্তিশালী রিমাইন্ডার। এই থেকে তিনটি বিষয় আমি শিখেছি:
প্রতিটি মুহূর্ত ভালভাবে বেঁচে থাকা
এই ঘটনা আমার মধ্যে এই বিশ্বাসকে দৃঢ় করেছে যে, জীবন খুব ছোট এবং মূল্যহীন। বিষয়টি নিয়ে সদা ভাবতে গিয়ে এটা আমাকে শিখিয়েছে যে-কোনও কিছুকে এত স্বাভাবিক গ্রহণ করা উচিত নয়; কারণ আপনার এখন যা কিছু আছে, চোখের পলকে তার সবকিছুই না হয়ে যেতে পারে।
আমি শিখেছি যে, আমার কেবল বর্তমানের জন্য বেঁচে থাকা উচিত, কারণ গতকাল চলে গেছে এবং সেটা আর নেই; পরের যে সেকেন্ডটা আসছে তা অদৃশ্য। তাই আমার কাছে শুধুমাত্র এখনকার সময়টা আছে। এই গভীর বিশ্বাস অবশ্যই আমাকে আরও ভালভাবে বাঁচতে, মনোযোগী হতে এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে সাহায্য করবে।
পরার্থপরতা এবং সহানুভূতি
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে এই বড় বিপর্যয়ের ফল হিসাবে আমি এই কয়েকদিন পরোপকার এবং নিঃস্বার্থতার উচ্চ মানসিকতা লক্ষ্য করেছি, এটা আমাকে দেখিয়েছে যে এখনও ভাল মানুষরা আছে এবং তাঁরা সহানুভূতি সহ একটি দেহের মতো কাজ করে।
আমি দেখতে পেয়েছি, ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে, লোকেরা তাদের যথাসাধ্য যা কিছু সাহায্য করতে পারে সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। আমি দেখেছি লোকেরা তাদের উষ্ণ বিছানা এবং ভাবনা ছেড়ে তাদের দ্বীনি ভাই ও বোনদের উদ্ধার করতে বিমানবন্দরের দিকে ছুটে আসছে।
আমি একজন ব্যবসায়ীকে তার বড় দোকানটির সবকিছু ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য দান করতে দেখেছি এবং আমি দেখেছি বহু পরিবার শত শত শিশুদের লালন-পালনের জন্য প্রতিযোগিতা করছে, যেসব শিশুরা তাদের পিতামাতাকে হারিয়েছে।
সব জায়গা থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষের এই কাজ করে যাওয়া যেন এক ঐকতান। এই সংকটের সময়ে সবাই যার যার ভূমিকা পালন করছে।
প্রশংসনীয় সহযোগিতা
অর্থনৈতিক সংকটের সময়, মানুষ খুব বেশি বস্তুবাদী হয়ে উঠে। কেবল কীভাবে আরও বেশি উপার্জন করা যায় সেজন্য চেষ্টা করে এবং কার কী অভাব রয়েছে তা নিয়ে ক্রমাগত বিরক্তি ও অভিযোগ করে। তা সত্ত্বেও, আমাদের হাতে থাকা ভাল জিনিসগুলোকে আমরা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হই। প্রকৃতপক্ষে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা মানুষটি যে এক নিঃশ্বাসে বুঝতে পারে জীবন কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
ভূমিকম্প আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে এই জীবন আমার গন্তব্যের পথে অপেক্ষার জন্য একটি স্টেশনমাত্র, আর আমি চিরন্তন পথের একজন পথিক। আমি যদি মৃতদের মধ্যে হতাম, তবে আমি যা ধন-সম্পদ উপার্জন করেছি তা এখানে রেখে যেতাম এবং কেবলমাত্র আমার সৎকাজ সমূহই আমার সঙ্গে থাকত।
এটা আমাকে শিখিয়েছে যে আমাদের মতপার্থক্য থাকার পরও অবশেষে আমরা এখনও একটি দেহের মতো হতে পারি; যে দেহের একটি অংশ ব্যথা করলে বাকি অংশও ব্যথা করে।
নিশ্চয়ই এই ভূমিকম্প আমাদের ভেতরের সাহসী প্রাণকে জাগিয়ে তুলেছে।