বিশেষ প্রতিবেদক: পশ্চিমবঙ্গ মাইনোরিটি কমিশনের উদ্যোগে ডেন্টাল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ডা. রফিউদ্দীন আহমেদ-এর কবরটিকে কলকাতা পুরসভার ‘মহামেডান বারিয়াল বোর্ড’ স্বীকৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তথ্য এবং দলিলপত্র অনুসারে এই কবরটি ডা. আর আহমেদের এবং এই কবরটির জায়গা যেহেতু কেনা রয়েছে, তাই অন্যকোনও পক্ষ এই কবরটির উপর কোনও ধরনের দখলদারি করতে পারবে না। এই ঘটনার শুরু কয়েক বছর আগে।
পদ্মভূষণ ডা. আর আহমেদ-এর নাম সকলেই জানেন। তিনি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের দন্ত চিকিৎসার জনক। তাঁর বহু কীর্তির মধ্যে একটি হচ্ছে তিনি কলকাতার মৌলালিতে সম্পূর্ণ নিজের পয়সায় কেনা জমিতে একটি ডেন্টাল কলেজ স্থাপন করেন। এই ডেন্টাল কলেজই উপমহাদেশের প্রথম ডেন্টাল কলেজ। পরবর্তীতে যা আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ নামে পরিচিত হয়। ডা. আর আহমেদ শুধু ডাক্তারই ছিলেন না, আমাদের সমাজ জীবনেও তাঁর অনেক অবদান রয়েছে। ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে তিনি ছিলেন তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য। মন্ত্রী হিসেবেও তিনি বিশেষ সাফল্যের অধিকারী। প্রথিতযশা এই মানুষটি অর্থাৎ ডা. রফিউদ্দীন আহমেদ ইন্তেকাল করেন ১৯৬৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। কলকাতার ৩ নম্বর গোবরা কবরস্থানে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির উপস্থিতিতে তাঁকে দাফন করা হয়। ৩ নম্বর গোবরা কবরস্থানের জমি ডা. রফিউদ্দীন আহমেদ আগে থেকেই খরিদ করে রেখেছিলেন। ডা. রফিউদ্দিন আহমেদের কবর হচ্ছে ব্লক নম্বর ৯, রো নম্বর ৫। কবরের নম্বরও হচ্ছে ৫। সংলগ্ন কেনা জমি ৬-তেও রয়েছে কবরের স্থান। আর এখানে কবর দেওয়া হয়েছে ডা. আর আহমেদের স্ত্রী, কন্যা এবং তাঁর এক পুত্রবধূকে। কবরস্থান কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সমস্ত জমিটি বাউন্ডারি ওয়াল দ্বারা চিহ্নিত রয়েছে। কবর কেনার সমস্ত রেকর্ড, রেজিস্টারকৃত দলিল সবকিছুই ডা. আর আহমেদ সাহেবের জামাতা মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ ও তাঁর নাতি ড. জাহিদ আহমেদ এবং নাতনি ডা. জরিনা আলিয়ার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
কিন্তু কর্মযোগী এই বিখ্যাত মানুষটির কবর অন্য একটি পরিবারের পক্ষ থেকে দখল করার চেষ্টা চলে। ডা. রফিউদ্দীন আহমেদ নাতনি জরিনা আলিয়ার কথায়, আমরা হঠাৎই ২০১৮ সালের মে মাসে কবরস্থানে গিয়ে লক্ষ্য করলাম, আমার নানাজান ডা. আর আহমেদের নাম লিখিত যে ফলক ছিল, তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর সেই জায়গায় ডা. আর আহমেদের কবরে একটি ফলক লাগানো হয়েছে ‘আনোয়ারা খাতুন, মৃত্যু-১৯৭৫ সালে’।
কিন্তু কোনোভাবেই এই ফলক সঠিক নয় বরং পদ্মভূষণ ডা. আর আহমেদের কবরটি অন্যায়ভাবে দখল করার একটি চেষ্টামাত্র। ডা. আর আহমেদের পরিবার কলকাতা পুরসভা থেকে শুরু করে নবান্নের বড় বড় অফিসারদের কাছে পত্র লিখে ও রিপ্রেজেনন্টেশন দিয়ে কোনও সুরাহা পাননি। শেষ পর্যন্ত তাঁরা দ্বারস্থ হন পশ্চিমবঙ্গ মাইনোরিটি কমিশনের কাছে। কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান তৎক্ষণাৎ কলকাতা পুরসভা ও মহামেডান বারিয়াল বোর্ডের কাছে নোটিশ পাঠাবার নির্দেশ দেন। কলকাতা পুরসভা এক চিঠিতে পশ্চিমবঙ্গ মাইনোরিটি কমিশনকে ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ জানিয়েছে, মহামেডান বারিয়াল বোর্ডে তাদের এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, গোবরা ৩ নম্বর কবরস্থানের ৫ ও ৬ নম্বর কবর-এর মালিক হচ্ছেন (ব্লক নম্বর ৯, রো নম্বর ৫) ডা. আর আহমেদের পরিবার। ফলে এই দু’টি কবর নিয়ে যে দীর্ঘ বিবাদ চলছিল, তার অবসান হল।
বলাবাহুল্য এই সিদ্ধান্তে ডা. আর আহমেদের উত্তরাধিকারিরা খুবই খুশি। তারা বলেন, আমরা শেষ পর্যন্ত তথ্য ও দলিলের ভিত্তিতে সুবিচার পেলাম। আর আহমেদ-এর নাতনি ডা. জরিনা আলিয়া বলেন, আমরা পশ্চিমবঙ্গ মাইনোরিটি কমিশন এবং তাঁর চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরানকে এ জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।