কৌশিক সালুই, বীরভূমঃ ডেউচা পাচামি কয়লা শিল্পাঞ্চলে জোর করে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা যাবে না, এই দাবি নিয়ে মিছিল করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। কিন্তু ডেউচাতে হওয়া কর্মসূচিতে দেখা মিলল না স্থানীয় আদিবাসীদের। উল্টে কয়লা খনির বিপক্ষে আন্দোলনকারী আদিবাসীদের পাল্টা বিক্ষোভের মুখে তারা এলাকাতেই ঢুকতে পারলেন না। বাধ্য হয়ে মাঝপথেই তাদের কর্মসূচি পরিবর্তন করতে হয়। এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ বহিরাগত লোকজন নিয়ে এলাকায় অশান্তি পাকানোর চেষ্টা বিজেপির।
বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত ডেউচা পাচামি কয়লা শিল্পাঞ্চলে জোর করে অনিচ্ছুক আদিবাসীদের জমি নেওয়া যাবে না এই দাবি নিয়ে কর্মসূচি করেন শুভেন্দু অধিকারী ও সুকান্ত মজুমদার। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি উপস্থিত লোকজনের সিংহভাগ বহিরাগত। এমনকি দেখা মিলল না স্থানীয় আদিবাসীদের।
উল্টোদিকে প্রস্তাবিত এলাকার মূল অংশে খনি বিরোধী আদিবাসী আন্দোলনকারীরা কালো পতাকা হাতে নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী গো ব্যাক স্লোগান দিলেন। পাশাপাশি অন্যান্য কোনও রাজনৈতিক দলকে তাদের এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা।
এদিন রায়পুর থেকে ডেউচা পর্যন্ত ১৪ নম্বর রানীগঞ্জ মোড়গ্রাম জাতীয় সড়কে হেঁটে কর্মসূচি শুরু করে বিজেপি। সেখানে স্থানীয় গৌরাঙ্গিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে সভা করেন তারা। এর আগে ডেউচাতে এসে শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছিলেন, মিছিল করে প্রস্তাবিত কয়লা শিল্পাঞ্চল এলাকায় যাবেন। কিন্তু যাদের সমর্থনে বিজেপির কর্মসূচি তাদের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে বাধ্য হয়ে ডেউচাতেই সভা করে তারা।
এদিন হারমা ডাঙ্গাল আমবাগানে খনি বিরোধী আদিবাসীরা জমায়েত করে হাতে কালো পতাকা নিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর স্লোগান দেন। যদিও এলাকার মানুষ বিজেপির এই আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। কারণ ডেউচা পাচামি কয়লা শিল্পাঞ্চল এলাকায় যাদের জমি জায়গা আছে তাদের সিংহভাগ মানুষজন এই প্রকল্পে জমি দেওয়ার জন্য সম্মতি দিয়েছে সরকারকে। তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ আদিবাসী মানুষ। এছাড়াও পুনর্বাসন প্রকল্পে জমির দাম দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে এবং চাকরির নিয়োগের প্রক্রিয়াও চলছে দ্রুত গতিতে।
রাজ্যের শাসক দলের দাবি বর্তমানে যে সমস্ত আদিবাসী মানুষজন কয়লা খনির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তাদের বেশির ভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকায় ঘরবাড়ি বা জমি জায়গা সেইভাবে নেই। যদিও থাকলেও সেটা খুব সামান্য কয়েকজনের মাত্র। তাছাড়া কোনভাবেই রাজ্য সরকার জোর করে কারো কাছে জমি অধিগ্রহণ করছে অভিযোগ এখন পর্যন্ত কেউ তুলতে পারেনি। আর শুভেন্দু অধিকারী তথা বিজেপি যাদের জন্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সেই আদিবাসীরাই তাদের কাছ থেকে সমর্থন নিতে নারাজ সে বিষয়টি আজকেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। কয়লা খনি বিরোধী প্রকৃতি বাঁচাও মহাসভার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা কোনভাবেই তাদের আন্দোলনের বিজেপিকে সরাসরি ঢুকতে দিতে নারাজ। কোনভাবেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ তারা মানবে না। তাই এলাকায় বিজেপি কোন কর্মসূচি করতে পারবে না।
এদিকে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা বলেন,ক্ষ্মযে প্রকল্প হলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ১ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে সরাসরি সেখানে। এখানে বিজেপি উন্নয়নের বিরোধিতা করছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘোষণা করেছেন জোর করে কারো কাছ থেকে জমি নেওয়া হবে না। এখনও পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকায় বহু মানুষজন স্বেচ্ছায় প্রস্তাবিত কয়লা শিল্পের জন্য নিজের জমি দেওয়ার জন্য সম্মতি জানিয়েছেন।