পুবের কলম প্রতিবেদকঃ মঙ্গলবার অল ইন্ডিয়া মিল্লী কাউন্সিলের পশ্চিমবঙ্গ শাখার এক প্রতিনিধি দল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নবান্নে এক বৈঠক করেন। মূলত মিল্লী কাউন্সিলের কলকাতায় অবস্থিত তিন পদাধিকারী এই বৈঠকে কাউন্সিলের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁরা মুসলিমদের কিছু সমস্যা নিয়ে এক স্মারকলিপিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেন। তিনজনের এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন জনাব সাহুদ আলম, ইমামে ঈদাইন ক্বারী ফজলুর রহমান এবং নাখোদা মসজিদের অন্যতম ইমাম মাওলানা শফিক কাসেমী। দুপুর ১টা ৩০মিনিট নাগাদ এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মিল্লী কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ শফিক কাসেমী পুবের কলম প্রতিনিধিকে বলেন, আমার যদি ভুল না হয়, তাহলে বলতে চাই প্রায় ১১ বছর পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও মুসলিম সংস্থার কথা শোনার জন্য সময় দিলেন। এর আগে মিল্লী কাউন্সিল ও আরও কয়েকটি মুসলিম সংস্থা ও প্রতিনিধি দল চেষ্টা করলেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি।
এই বৈঠকে অল ইন্ডিয়া মিল্লী কাউন্সিল পশ্চিমবঙ্গের তরফ থেকে একটি স্মারকলিপি মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুরোপুরি সমর্থন দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে মিল্লী কাউন্সিলের স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে যে, গত দুই বছর ধরে পশ্চিমবাংলার কয়েকটি স্থানে সাম্প্রদায়িক সংঘাত হয়েছে। আর এর জন্য দায়ী হচ্ছে পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরা। এদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। উল্লেখ্য, তিনদিন আগে কলকাতার খিলাফত কমিটিও এক সাংবাদিক সম্মেলন করে শান্তি প্রতিষ্ঠার আবেদনের সঙ্গে দোষী আধিকারিকদের শাস্তি এবং সকল ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে।
স্মারকলিপিতে আরও একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হচ্ছে, তাঁরা ২০২৩ সালের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০২৪ সালে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মুসলিমদের জন্য জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতিনিধিত্ব দাবি করেছেন। এছাড়া পঞ্চায়েত এবং শহরকেন্দ্রিক বিভিন্ন সরকারি সংস্থাতেও সংখ্যালঘুদের সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন। এসসি, এসটিদের জন্য আশ্রম-স্কুলের মডেলে মুসলিমদের জন্য ইংরেজি মাধ্যম আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠার দাবি তোলা হয়েছে। স্মারকলিপিতে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়ে আরও বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে ওবিসি কোটার যে ব্যবস্থা সরকার করেছে, আসলে তা কার্যকর হচ্ছে না। এছাড়া সরকারি কর্মনিয়োগ ব্যবস্থা এবং সার্ভিস কমিশনগুলিতে নিয়ম থাকা সত্ত্বেও মুসলিম প্রতিনিধিদের রাখা হয় না। সে জন্য নিয়োগ প্যানেলে মুসলিম সদস্য থাকা ব্যবস্থা যেন সুনিশ্চিত করা হয়।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা নিয়েও স্মারকলিপিতে উদ্যোগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, সিনিয়র আধিকারিক এবং শিক্ষাবিদদের নিয়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্মের তত্ত্বাবধানের জন্য একটি উপদেষ্টা মণ্ডলী গঠন করা হোক। এই উপদেষ্টা মণ্ডলী, ওয়াকফ বোর্ড ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রকেরও কাজকর্ম সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারবে। এছাড়া বিভিন্ন পরীক্ষায় যাতে পশ্চিমবঙ্গের যে উর্দু সম্প্রদায় রয়েছে, তারা যেন উর্দু ভাষাতেও উত্তরপত্র লেখার সুযোগ পায় সে জন্য জোর দাবি জানানো হয়েছে।
মাওলানা শফিক কাসেমী বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের আলোচনা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের দাবিগুলি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।