আহমদ হাসান ইমরান: ফিলিস্তিনের গাজা এবং হামাসকে নিয়ে পশ্চিমা নয়া উপনিবেশিকতাবাদীরা বেহদ মুশকিলে পড়েছে। তারা যা পরিকল্পনা করেছিল তার কিছুই কিন্তু সফল হতে পারেনি। সারা পশ্চিমা বিশ্বে এমনকি আমাদের দেশ ভারতও যায়নবাদী প্রচারণায় বিশ্বাস করত যে, ইসরাইলি সেনা বিমান ও স্থলবাহিনী অপরাজেয়। তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একেবারেই ছিoহীন। সব আরব দেশগুলি মিলেও ইসরাইলের সঙ্গে পেরে উঠবে না।
আর অতীতে মার্কিন ও ব্রিটেনের সহায়তায় ইসরাইল বারে বারে আরব দেশগুলির উপর হামলা চালিয়েছে। আর ১৯৬৭ সালেও বেশ কয়েকটি আরব দেশ মিলেও শেষ পর্যন্ত পরাস্ত করতে পারেনি ইসরাইলকে। বরং ইসরাইল জেরুসালেম-সহ বিস্ত+র্ণ এলাকার দখল নিয়েছে। ছোট্ট অবরুদ্ধ উপত্যকা গাজায় ইসরাইল মার্কিন ও ব্রিটেনের মদদে যে বর্বরতম যুদ্ধ, ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যা চালাচ্ছে, শুক্রবার তা ১২০দিন অতিক্রম করেছে।
অর্থাৎ ৭ অক্টোবর, ২০২৩ শুরু হওয়া এই যুদ্ধ এখন ৪ মাসে পড়েছে। কিন্তু বৃহৎ দুই পশ্চিমা পরাশক্তির মদদ সত্ত্বেও ইসরাইল সামান্য গাজাকে পদানত করতে পারেনি। হামাস মুজাহিদরা তাদের প্রতিরোধ চালাচ্ছে এবং আশ্চর্য রকমভাবে ইসরাইলি সেনা ও নৌবাহিনীর ব্যাপক ধ্বংস সাধন করছে। ইতিমধ্যেই হাজার হাজার মারাত্মক আহত ইসরাইলি সেনা তেল আবিবের হাসপাতালগুলিতে ভর্তি রয়েছে। আর ইসরাইলি সেনাদের মৃত্যুর সংখ্যাও ক্রমশ ফুলে ফেঁপে উঠছে।
ইসরাইল সরকারিভাবে যে সংখ্যা বলছে, আসল নিহতের সংখ্যা যে তার থেকে অনেক অনেক বেশি তা ইসরাইলি পত্রিকাগুলিই বলছে। এখনও হামাসের যোদ্ধারা ইসরাইলের উপর রকেট ও মিসাইল হামলা সমানে চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি বোমা ও মিসাইল বর্ষণ হামাসকে দমাতে পারেনি। তারা ঈমানি শক্তিতে লড়ে চলেছে।
এখনও পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের শুধু নিহতের সংখ্যা ২৭,৫০০ পেরিয়েছে। আর ফিলিস্তিনের ফুলের মতো শিশুদের কমপক্ষে ১১,৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। আহতের সংখ্যা নিহতের প্রায় ৩ গুণ। কিন্তু মার্কিন ও ব্রিটেনের অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা সত্ত্বেও ইসরাইল ক্ষুদ্র ভূ-খণ্ড গাজা থেকে হামাসকে সরাতে পারেনি। তারা প্রবল বোমা ও মিসাইল বর্ষণ করেও হামাসের সুড়ঙ্গগুলিকেও কবজা করতে পারেনি। হামাসের ৮০ শতাংশ সুড়ঙ্গ এখনও অক্ষত রয়েছে। আর এখান থেকেই ইচ্ছেমতো বের হয়ে ইসরাইলি সেনা, ট্যাঙ্ক ও সাঁঝোয়া গাড়ির উপর হামলা চালাচ্ছে ফিলিস্তিনি মুজাহিদরা।
কিন্তু গাজার বেসামরিক অধিবাসীদের জন্য যে নারকীয় পরিস্থিতির সৃৃষ্টি হয়েছে, তা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। রাফা-তে গাজার ২৩ লক্ষ অধিবাসীর অর্ধেক লোক আশ্রয় নিয়েছে। প্রবল শীত, ক্ষুধার মধ্যে সামান্য তাঁবুতে এরা বসবাস করছে। আর ইসরাইল এখানেও এখন হামলা চালাবার কথা ঘোষণা করেছে। তবে গাজা শহর এবং উপত্যকার বিরাট অঞ্চল থেকে মার খাওয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত ইসরাইলি বাহিনী পালিয়ে গেছে। বহু ক্ষেত্রে তারা অস্ত্রশস্ত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেনি।
কিন্তু গাজায় যে তারা পরাজিত তাদের পালিয়ে যাওয়াই সেই কথা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। এখন প্রশ্ন, এই যুদ্ধের সমাধান কোথায়? ইসরাইল বলছে, তারা কোনোমতেই দ্বিরাষ্ট্র সমাধান বা ফিলিস্তিনের জন্য গাজা এবং পশ্চিম তীরে আলাদা রাষ্ট্র তৈরি করার বিষয়কে মেনে নেবে না। কিন্তু এতদিন পরে আমেরিকা, ব্রিটেন ও অন্য পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলি বলছে তারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। সেখানে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি রাষ্ট্র গড়ে তোলা হবে। কিন্তু এ জন্য তাদের যে বৃহৎ পরিকল্পনা রয়েছে, তার স্বরূপ অবশ্যই বেশ আকর্ষণীয়। এই বিষয়ে আগামীতে আলোকপাত করা হবে।