বিশ্বজিৎ ঘোষ: আর কয়েক দিন পরেই ঈদ। এ দিকে চৈত্র মাসের ‘সেল’-এর বাজার-ও রয়েছে। অথচ, পোশাকের বিভিন্ন দোকানে রবিবার ছুটির দিনেও সেভাবে ভিড় জমে উঠতে দেখা গেল না। বিভিন্ন দোকানি এমনই বলছেন, কাজ নেই, মানুষের হাতে টাকা কমে গিয়েছে। যার জেরেই বাজারের অবস্থা এমন মন্দা। তবে, একই সঙ্গে তাঁদের আশা, ঈদের আগে বিক্রিবাট্টা বাড়বে।
ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এ দিন শিয়ালদহের শিশির মার্কেটে এসেছেন ঘুটিয়ারি শরিফের পিংকি। ঈদের জন্য ছেলের পোশাক কিনতে কিনতে তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসায় পড়ে ছেলে। ওকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে এই কেনাকাটা করে নিচ্ছি।’ এই দোকানে ‘সেল’ চলছে। সব দোকান নয়, তবে এই মার্কেটের অন্য আরও কিছু দোকানেও চলছে চৈত্র মাসের ‘সেল’। তেমনই এক দোকানে এসেছেন ক্যানিংয়ের মিজানুর। তাঁর কথায়, ‘ঈদের কেনাকাটা করতে আজ পরিবার নিয়ে এসেছি।’
কিন্তু, বিক্রিবাট্টা কেমন হচ্ছে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোকানের কর্মী বলেন, ‘বাজারের অবস্থা খুব খারাপ, আগের মতো বিক্রিবাট্টা নেই।’ ‘সেল’ চলছে, এখানকার অন্য একটি দোকানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মীর কথায়, ‘রবিবার ছুটির দিনেও বিক্রি সেভাবে হল না। আগের মতো আর নেই বাজার।’ এই মার্কেটের অন্য বিভিন্ন দোকানেও দেখা গেল দোকানি অপেক্ষায় রয়েছেন ক্রেতার। ‘সেল’ চললেও ফাঁকা রয়েছে ওই সব দোকান।
কাল বদলের নিয়ম মেনে হয়তো বছর শেষে চৈত্র মাসের ‘সেল’-এর বাজার-ও এখন আর নেই আগের মতো। তবে, ‘সেল’-এর বিকল্প যদি ‘ছাড়’ হয়, তা হলে বছরের বিভিন্ন সময় বিশেষ দিনকে সামনে রেখে এই ‘ছাড়’-এর বিজ্ঞাপন দেখা যায়। এর পাশাপাশি এখন অনলাইনেও বেড়ে চলেছে বিকিকিনি। এ সব সত্ত্বেও এখনও চৈত্র মাসের ‘সেল’-এর জন্য ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন বিভিন্ন দোকান। এন্টালির কাছে এ জে সি বোস রোডের ধারে অবস্থিত এমন এক দোকানের কর্মী তপন মণ্ডলের কথায়, ‘এখন বিক্রি নেই সেভাবে, অনেক কমে গিয়েছে।’
এন্টালি মার্কেটে এ দিন ছেলের জন্য পোশাক কিনতে এসেছেন ট্যাংরার বাসিন্দা শাকিলা নাজ। ঈদের জন্য কিনলেন? তিনি বলেন, ‘কিছু কিনলাম। দরকার হলে আবার পরে কিনতে আসব।’ তবে, এই মার্কেটের এক দোকানি গণেশ সাউ বলেন, ‘ঈদের জন্য রবিবারও দোকান খোলা রেখেছি। তবে বিক্রি সেভাবে হচ্ছে না।’ দীর্ঘ বছরের দোকান তাঁর। কী মনে হচ্ছে, কেন এমন অবস্থা? তিনি বলেন, ‘কোভিডের সময় থেকে বহু মানুষের কাজ চলে গিয়েছে, আয় কমে গিয়েছে অনেকের। কাজ নেই, অনেক মানুষের হাতে টাকা এখন কমে গিয়েছে। ফলে আগের মতো আর কিনতে আসছেন না অনেক মানুষ।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘নতুন দোকানও অনেক হচ্ছে। অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে। এর ফলেও আমাদের মতো দোকানে বিক্রি কমে গিয়েছে।’
রবিবার, ছুটির দিনে মল্লিক বাজারের বিভিন্ন পোশাকের দোকানেও ঈদের কেনাকাটার জন্য ভিড় সেভাবে দেখা গেল না। এখানকার এক দোকানি সুরেশ শুক্লার কথায়, ‘বিক্রি সেভাবে হচ্ছে না। কিছু চেনা ক্রেতা রয়েছেন। তাঁরা আসছেন।’ ক্রেতার অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেল এ দিন এন্টালি মার্কেটের এক দোকানি মোহাম্মদ সাদিককে। তিনিও বলেন, ‘বিক্রি তেমন হচ্ছে না এখন।’ তবে তিনি অবশ্য আশায় রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘এখন মাসের শেষ। তাই হয়তো বিক্রি এখন তেমন নেই। তবে, আর কয়েক দিন পরেই ঈদ। আশা করছি, ঈদের আগে নিশ্চয়ই বিক্রি ভালোই হবে।