পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ সাফল্য তাদের কাছেই ধরা দেয় যারা কঠোর পরিশ্রম করে। কঠোর ভাবে নিজেদেরকে উৎসর্গ করে দেয় ‘মিশন’ পূরণের পিছনে। বাস্তবে এর জলজ্যান্ত উদাহরণ দেশের মুসলিমদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ মহিলা নিউরোসার্জন ডা. মরিয়ম আফিফা আনসারি। পরিশ্রম, মেধা ও আল্লাহর উপর ভরসা তাকে এনে দিয়েছে এই প্রাপ্তি। মরিয়ম আফিফা আনসারি সবসময় একজন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন।
চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করার কথা ভাবতেন। তার এই স্বপ্নটি বাস্তবে পরিণত হয়েছিল যখন তিনি ২০২০ সালে সর্বভারতীয় নিট পরীক্ষায় ১৩৭তম স্থান অর্জন করেছিলেন।মরিয়ম বলেন, এখন আমি মিস আফিফা থেকে ডা. আফিফা হয়েছি এবং আমার সাদা কোট পরা ও স্টেথোস্কোপ দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
ছোট থেকেই মেধাবী ছাত্রী ছিলেন মরিয়ম। ক্লাসে পড়ুয়াদের মধ্যে প্রথম সারিতেই ছিল তার স্থান। মরিয়ম মালেগাঁওয়ের একটি উর্দু মাধ্যম স্কুলে তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। দশম শ্রেণি পর্যন্ত উর্দু মাধ্যম স্কুলে শিক্ষিত হয়েও মরিয়ম তার ধারাবাহিক সাফল্যে অনেককে অবাক করে দিয়েছে।
মরিয়াম মালেগাঁওয়ের একটি উর্দু মাধ্যম স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর হায়দরাবাদ চলে আসেন। হায়দরাবাদে তিনি রাজকুমারী দুরুশেভার গার্লস হাই স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন, যেখানে তিনি স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। মরিয়ম ওসমানিয়া মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেছেন এবং তারপরে একই কলেজ থেকে জেনারেল সার্জারিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
এমবিবিএস কোর্সে পাঁচটি স্বর্ণপদক জিতেছেন মরিয়ম। ২০১৭ সালে তার কোর্স শেষ করার পর তিনি একই কলেজে জেনারেল সার্জারিতে মাস্টার্স কোর্সে বিনামূল্যে ভর্তি হতে পেরেছিলেন।২০১৯ সালে তিনি ইংল্যান্ডের রয়্যাল কলেজ অফ সার্জনস থেকে তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এমআরসিএস সম্পন্ন করেন। ২০২০ সালে তিনি ন্যাশনাল বোর্ড কোর্সে ডিপ্লোমা করেছিলেন।এটি একটি বিশেষ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি যা ভারতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দেওয়া হয়। ওই বছরই নিট এস এস পরীক্ষায় উচ্চ স্কোর করার পরে তাকে ওসমানিয়া মেডিকেল কলেজে এমসিএইচ-এ বিনামূল্যে ভর্তি নেওয়া হয়। মরিয়ামের ক্রমাগত কঠোর পরিশ্রম তাকে সাফল্যের পথে প্রতিটি বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করেছে। ডা. মরিয়ম আফিফা আনসারি ভারতের তরুণ প্রজন্মের জন্য হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণা।
তিনি ধর্মভীরু। হিজাব পরেন। নামায পড়েন। তার বক্তব্য, আমার সাফল্য আল্লাহর দান এবং মানুষের সেবা করা এখন আমার দায়িত্ব। পেশার মাধ্যমে সমাজের সেবা করার চেষ্টা করব। মুসলিম মেয়েদের একটি বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, হাল ছাড়বেন না, কাউকে কখনও বলার সুযোগ দেবেন না যে আপনি এটি করতে পারবেন না। সফল হয়ে আপনি তাদের ভুল প্রমাণ করুন। মরিয়মের মা একজন শিক্ষিকা। তিনি তার মেয়েকে নিয়ে গর্বিত। লেখাপড়ার পাশাপাশি মরিয়াম পেইন্টিং, ক্যালিগ্রাফি এবং ইসলামি শিক্ষায়ও পারদর্শী।