পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: দুই পড়শি দেশের মধ্যে বিতর্ক লেগেই থাকে। দ্বন্দ্ব-উত্তাপের গনগনে আঁচ অনুভব করা যায় সব সময়। দুই দেশের রাজনীতিবিদরাই প্রতিবেশীকে পরস্পর হেয়, আক্রমণ করে নিজেদের পাল্লা ভারী করতে চায়। সেই আবহে ফের কি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হতে চলেছে? নাকি চিন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত লড়াই হবে? এবার মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা শোনালো আরও চাঞ্চল্যকর কথা। পাকিস্তান উসকানি দিলে ভারত যেকোনও সময় পাকিস্তান আক্রমণ করতে পারে বলে জানিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা। পাকিস্তানের উসকানিতে প্রয়োজন হলে ভারতের মোদি সরকার সামরিক শক্তিও ব্যবহার করতে পারে। পাশাপাশি ভারত ও চিনের মধ্যে চলমান বিবাদ নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। ভারত-চিনের মধ্যেও যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। ২০২০ সালে লাদাখে মিলিটারি সংঘর্ষের পর থেকেই উত্তেজনার পারদ ক্রমশ চড়েছে।
ভারতের সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা চিনের লাল ফৌজের দখলে চলে গিয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। রাহুল, খাড়গে, ইয়েচুরিরা এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলেন, মোদি সরকার পাকিস্তান সীমান্তেই শুধু সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করতে পারে। চিনকে কোনও জবাব দিতে পারে না। কিন্তু এবার মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে ভিন্ন কথা।
এই বিবাদ চলছে দুটি নিউক্লিয়ার শক্তিধর দেশের মধ্যে। যাতে ইতিমধ্যেই নাক গলাচ্ছে আমেরিকা। ‘কোয়াড’ জোট গঠন করে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপানের সাহায্যে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রভাব বলয় সৃষ্টি করতে চাইছে আমেরিকা। এ ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখানো হচ্ছে পাকিস্তান ও চিনকে। এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে কোনও যুদ্ধের ফ্রন্ট খুলতে চাইছে কি আমেরিকা, এ ব্যাপারে সন্নিহান ওয়াকিফহাল মহল।
প্রসঙ্গত, ১৯৬২ সালে নেহরুর আমলে ভারত ও চিন যুদ্ধ বেঁধেছিল। আর গত শতকের শেষে অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় কারগিল যুদ্ধ হয়েছিল পাকিস্তানের সঙ্গে। ১৯৯৯ সালে সেই যুদ্ধের পরই বিজেপি বিপুল জয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল দেশে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে পাকিস্তান বিরোধী জিগির তুলে ভোটে ফায়দা তোলার চেষ্টা করতে পারে মোদি সরকার, মত রাজনৈতিক মহলের। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট সেই মতকেই ন্যায্যতা দিচ্ছে।
ইউএস ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের ‘দি অ্যানুয়াল থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট’ মার্কিনিদের রুটিন গোয়েন্দা রিপোর্ট। প্রতিবছরই তারা এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। তাদের দাবি, পাকিস্তান ভারতবিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠীকে সমর্থন দেয়। কাশ্মীরকে নিয়ে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে মাঝেমধ্যেই। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এটা মেনে নেবেন না। তার নেতৃত্বে পালটা দিতে প্রস্তুত তারা। আগের তুলনায় অনেক জোরালোভাবেই প্রত্যাঘাত করবে ভারত। এভাবেই উপমহাদেশে যুদ্ধের জল্পনা উসকে দিতে চেয়েছে আমেরিকা। বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যু, সীমান্তে জঙ্গিহানা নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক বেশ নাজুক। আর মোদি সরকার কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে বেশ কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। জঙ্গি দমনে সেনার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
কাশ্মীর নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তান মুখ খুললেই তার কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে ভারত, পাকিস্তান ও চিনের দ্বন্দ্বের মাধ্যমে ফায়দা লুটতে চাইছে আমেরিকা। অবশ্য সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করতে চায় আমেরিকা। মার্কিন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র নেড প্রাইস বার্তা দিয়েছেন, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে আমরা আগ্রহী। সে-জন্য পাকিস্তানের সহযোগিতা প্রয়োজন। সন্ত্রাস দমনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগ।