পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বিগত দুবছর আগে ভারতে হানা দেয় করোনা ভাইরাস। এর পর ধীরে ধীরে এই সংক্রমণ দেশের রাজ্যগুলিতে থাবা বসায়। করোনার প্রথম ঢেউ-এর পরই চলে আসে দ্বিতীয় ঢেউ। তার পরেই ওমিক্রনের রূপ ধরে এসে হাজির হয় করোনার তৃতীয় ঢেউ। ২০২১ থেকেই করোনা প্রতিরোধকারী ভ্যাকসিন বাজারে আসতে শুরু করে। প্রথম ও দ্বিতীয়ের পর প্রিকওশন ডোজ ও বুস্টার ডোজ নেওয়ার কথা ঘোষণা করে কেন্দ্র সরকার। সেই বুস্টার ডোজ নিয়ে এবার একটি বিশেষ ঘোষণা করল কোভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থা হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেক।
সংশ্লিষ্ট সংস্থার দাবি, কোভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ ওমিক্রন এবং ডেল্টা দুই প্রজাতির উপরই কার্যকর, এমনটাই তথ্য উঠে এসেছে একটি নয়া গবেষণায়। নতুন গবেষণায় জানা গেছে কোভ্যাকসিনের-এর একটি বুস্টার ডোজ সার্স- কোভ-২ ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। এছাড়া ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট BA.1.1 এবং BA.2 থেকে রক্ষা করবে এই ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি হ্যামস্টার-এর (ইঁদুর সদৃশ প্রাণী) উপর গবেষণা চালিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।
আইসিএমআর ও হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয় কোভ্যাকসিন। করোনার অতি দ্রুতগতিতে সংক্রমণের ফলে ভারত বায়োটেকের কোভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয় ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে। দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় কোভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজের কার্যকারিতার ওপরে পরীক্ষা চালানো হয়। এর পর ওমিক্রন মোকাবিলায় কার্যকারিতা অনুসন্ধানে সিরিয়ান হ্যামস্টারের ওপরে এর পরীক্ষা চালান গবেষকরা। শরীরে অ্যান্টিবডির কার্যকারিতা, ক্লিনিক্যাল পর্যবেক্ষণ, ভাইরাস শরীরে কমার প্রবণতা, ফুসফুসে রোগের তীব্রতা কমা নিয়ে দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ চলে।
বিস্তর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গবেষকরা জানান, কোভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজের মাধ্যমে ফুসফুসে ভাইরাস সংক্রমণের তীব্রতা ও ফুসফুসের ক্ষত সারাতে এই ভ্যাকসিন কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট-এর সঙ্গে তুলনা করলে কোভ্যাকসিন প্লাসিবো গ্রুপের প্রতিরোধকারী গ্রুপ।
গবেষণা পত্রে দাবি করা হয়েছে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ উভয় ক্ষেত্রেই সমজাতীয় ভ্যাকসিন স্ট্রেনের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে পোস্ট ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে ফুসফুসে রোগের তীব্রতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনেছে। যা কোষের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী ইমিউন প্রক্রিয়া বাড়ানোর ইঙ্গিত দেয়।
BA.1 ও BA.2 ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট কোভ্যাকসিন প্রয়োগে লক্ষণীয় ভাবে ভালো ফল দিয়েছে।
উল্লেখ্য, কোভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থা হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেক আগেই দাবি করেছিল কোভ্যাকসিন করোনা প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি ফল দেবে। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরে ছয়মাসের মধ্যে কোনও প্রতিকূলতা দেখা যায়নি। শরীরের কোষগুলিতেও এই ভালো প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে কোভ্যাকসিন হল ভারতে তৈরি প্রথম ভ্যাকসিন যা সুরক্ষিত ও ইমিনিউজেনিসিটি ফলদায়ী বলে প্রমাণিত হল।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে দুই-ডোজের BBV152 টিকা সিরিজের ছয় মাস পর, কোষের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সমধর্মী ও বিষমধর্মী স্টেন (আলফা, বিটা, ডেল্টা এবং ডেল্টা প্লাস) উভয়ের অ্যান্টিবডি তৈরির উপর টিকে রয়েছে। তৃতীয় ভ্যাকসিন নেওয়ার পর শরীরে সমধর্মী ও বিষমধর্মী প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে। গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী এই প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে ১৯ থেকে ২৬৫ গুণ। বুস্টার BBV152 টিকা নিরাপদ বলেই দাবি গবেষকদের, কারণ এই টিকা নেওয়ার ফলে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এর ফলে সহজে কোনও রোগ শরীরে বাসা বাধতে পারে না।