পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্য নিয়ে গর্বিত গোটা ভারত। দেশ-বিদেশ থেকে শুভেচ্ছা ছাপিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চন্দ্রযান-৩-এর এই ঐতিহাসিক জয়কে বিজেপি সরকারের জমানায় অন্যতম সাফল্য হিসেবে বলে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন।
তবে সফলতার পিছনে রয়েছে একটি কালো দিক!
চন্দ্রযান-৩ লঞ্চপ্যাড তৈরিতে সাহায্যকারী প্রযুক্তিবিদ এখন ইডলি বিক্রি করেন। ওই প্রযুক্তিবিদের নাম দীপক কুমার উপরারিয়া। এইচ ই সি’তে (হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন লিমিটেড) একজন প্রযুক্তিবিদ হিসেবে কর্মরত। দীপক ইসরো-এর চন্দ্রযান-৩ লঞ্চপ্যাড তৈরির জন্য কাজ করেছিলেন। বর্তমানে রাঁচিতে ইডলি বিক্রি করেন।
রাঁচির ধুরওয়া এলাকায় পুরনো বিধানসভা ভবনের উলটো দিকে তার ইডলির দোকান। তিনি ভারত সরকারের সিপিএসইউ তে কর্মরত। যারা চন্দ্রযান-৩ এর জন্য ভাঁজ করার প্ল্যাটফর্ম ও স্লাইডিং দরজা তৈরি করেছিল। ১৮ মাস ধরে বেতন পাননি দীপক। রাঁচিতে এইচইসি’র কর্মীরা বেতন না পাওয়া নিয়ে প্রতিবাদও জানায়। কোম্পানির প্রায় ২৮০০ কর্মীর দাবি, প্রায় ১৮ মাস ধরে বেতন দেওয়া হচ্ছে না তাদের। প্রযুক্তিবিদ দীপক উপরারিয়া সেই হতভাগ্যদের মধ্যে একজন।
সংবাদমাধ্যকে উপারারিয়া জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন হল তিনি ইডলির দোকান দিয়েছেন। দোকার আর অফিসের কাজ একসঙ্গে সামলাচ্ছেন। সকালে তিনি ইডলি বিক্রি করেন আর দুপুরে অফিসে কাজে যান। ফের বাড়ি ফেরার আগে তিনি সন্ধ্যায় ইডলি বিক্রি করেন। প্রযুক্তিবিদ দীপক আরও জানিয়েছেন, বাড়ির সমস্ত দায়িত্বভার সামলানোর জন্য তিনি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার করতেন।
২ লক্ষ টাকা লোন নিয়েছিলেন। তিনি সেই ঋণ মেটাতে পারেননি, তাকে ঋণ খেলাপি বলে ঘোষণা করা হয়। সেই ধার শোধ করতে তিনি আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধার নেন। এইভাবে তার দেনা বেড়ে ৪ লক্ষ টাকায় পৌঁছে যায়। কাউকে টাকা ফেরত না দিতে পারায় সবাই ধার দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে স্ত্রীয়ের গহনা বন্ধক রাখতে হয়েছেন। এর পরেই ইডলি বেচার সিদ্ধান্ত নেন। দীপক জানান, স্ত্রী ভালো ইডলি তৈরি করতে পারে। প্রতিদিন ইডলি বেচে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। ৫০ থেকে ১০০ টাকা লাভ হয়। ওই টাকা দিয়ে সংসার চালিয়ে নিচ্ছেন।
Meet Deepak Kumar Uprariya who sells Tea & Idli in Ranchi. He is a Technician, who worked for building ISRO’s Chandrayaan-3 launchpad. For the last 18 months, he has not received any salary.
“When I thought I would die of hunger, I opened an Idli shop” (BBC Reports) pic.twitter.com/cHqytJvtfj
— Cow Momma (@Cow__Momma) September 17, 2023
উপারারিয়া আরও জানান, তিনি একসময় মধ্যপ্রদেশের হারদা জেলায় থাকতেন। পরে ২০১২ সালে বেসরকারি কোম্পানির চাকরি ছেড়ে তিনি এইচ ই সিতে যোগ দেন ৮ হাজার টাকা বেতনে। ভেবেছিলেন সরকারি কোম্পানিতে ভবিষ্যতে তার জীবনে উন্নতি ঘটবে। কিছুই হয়নি। দুজন সন্তান। এই বছর তাদের স্কুলের বেতন দিতে পারেননি। স্কুল থেকে বার বার শিক্ষিকারা বলছেন, ‘এইচ ই সিতে কাজ করেও কেন স্কুলের বেতন দেন না তোমার বাবা? বার বার এই কথা শুনে হীনমন্যতায় ভোগে আমার সন্তানেরা। তখন বাবা হিসেবে তাদের কাছে খুব ছোট লাগে।
জানা গেছে, এই ধরনের অবস্থার শিকার শুধু দীপক উপারারিয়া নয়। এইচ ই সি’র বহু প্রযুক্তিবিদ একই অবস্থার শিকার। ফলে জীবন চালাতে তারা অফিসের কাজের সঙ্গে অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।