পারিজাত মোল্লা: সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ওঠে রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের দাখিল মামলা। কোনও কারণ ছাড়াই ২০২০ সালে কেন্দ্রের ‘কমন সার্ভিস সেন্টার’ প্রকল্প কেন বন্ধ করল রাজ্য? বিষয়টি জানতে চেয়ে মামলা করেছিলেন সুকান্ত মজুমদার। সেই মামলার শুনানিতেই রাজ্যের কাছে কেন্দ্রীয় প্রকল্প বন্ধের কারণ জানতে চাইল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। বাংলায় কেন ২০২০ সালে হঠাৎ করে কেন্দ্র সরকারের ‘কমন সার্ভিস সেন্টার’ (সিএসসি) প্রকল্প বন্ধ করে দিল তা স্পষ্ট নয়।অবিলম্বে রাজ্যকে এ ব্যাপারে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি কেন্দ্র সরকার ও অন্যান্য পক্ষকে তাদের রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে এদিন নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
এছাড়া বাংলা সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে রাজ্যে কী পরিষেবা দেওয়া হয়? তা ১৫ দিনের মধ্যে হলফনামায় জানাতে হবে রাজ্যকে বলে জানা গেছে। এই বিষয়ে মামলাকারী সুকান্ত মজুমদারের আইনজীবী এদিন জানান, ‘প্রায় দুশো সরকারি প্রকল্প এর মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হত। মূলত নীচুতলার মানুষের হাতে সরকারের দেওয়া সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেওয়াই ছিল এর উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য, আইন ও অর্থনৈতিক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হত গ্রামীণ এলাকায়। ২০২০ সালে হঠাৎ করে রাজ্য সরকার ‘বাংলা সহায়তা কেন্দ্র’ চালু করে কেন্দ্রের কমন সার্ভিস সেন্টার বন্ধ করে দেয়। এরফলে প্রায় ৪০ হাজার ছেলেমেয়ে বেকার হয়ে যায়। একইসঙ্গে কেন্দ্র সরকারের প্রায় দুশো’টি স্কিম পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয় সাধারণ মানুষকে’।
কেন্দ্রের তরফে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ কে জানায়, ‘রাজ্য সরকার যেভাবে কেন্দ্রের এই স্কিম বন্ধ করে দিয়েছে তা সংবিধান বিরোধী। জনগণনা প্রকল্পে গোটা দেশের অন্যান্য রাজ্য কাজ করলেও পশ্চিমবঙ্গ কোনও কাজ করেনি’। প্রায় ৩০টি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে কেন্দ্রের এই ২০০টি প্রকল্প মানুষের কাছে দেওয়া হত। সেগুলো কেন হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া হল? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় কেন্দ্রের তরফে।
জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ স্কিম চালু করতে আর্জি জানিয়ে চিঠিও দিয়েছিল কেন্দ্র। সংবিধানের ২৫৬ ও ২৫৭ ধারা অনুযায়ী এই স্কিম চালু রাখতে বাধ্য রাজ্য। কিন্তু রাজ্য এতদিনেও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলাকারী জানান, ‘রাজ্য জোর করে এই প্রকল্প বন্ধ রাখার জন্য কেন্দ্রের আরও অনেক জনকল্যাণকর কাজের ক্ষেত্রেও রাজ্য ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে’।যদিও এদিন রাজ্যের তরফে কোনও আইনজীবী আদালতে হাজির ছিলেন না। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের রিপোর্ট তলব করেছে।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সম্প্রতি একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে কেন কমন সার্ভিস সেন্টার বন্ধ করে দিল রাজ্য সরকার তা জানতে চেয়েছেন। পাশাপাশি রাজ্য যাতে অবিলম্বে এই প্রকল্প চালু করে সাধারণ মানুষের সুবিধার কথা ভেবে আদালত সেই নির্দেশ দিক এই আর্জিও জানিয়েছিলেন তিনি। এই মামলার শুনানিতে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘রাজ্য সরকার যে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার সমকক্ষ নয়’। কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল তা জানতেই আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই বিষয়ে সরকারকে হলফনামা দিতে হবে আদালতে। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ মনে করছে, ‘কেন্দ্রীয় সুবিধা বন্ধ করে রাজ্য সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা আদালতের কাছে স্পষ্ট নয়’।