পারিজাত মোল্লাঃ চলতি সপ্তাহে আলিপুর আদালত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের আবেদনের ভিক্তিতে জানিয়েছে, ‘ যেকোনো দিন বিকেল ৩টে থেকে বিকেল ৫টা অবধি জেল হেফাজতে থাকা প্রসন্ন রায় এবং প্রদীপ সিং কে জেরা করতে পারবে’।
নিয়োগ দুর্নীতিতে আগেই গ্রেফতার হয়েছেন প্রসন্ন রায় ও প্রদীপ সিং। তাঁরা বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছেন। এবার আদালতের অনুমতি মেলায় জেলে গিয়েই তাঁদের জেরা করবে সিবিআই। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত মিডলম্যান প্রসন্ন রায় ও প্রদীপ সিংকে এবার সংশোধনাগারে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় সিবিআই।
অতি সম্প্রতি এক যুব তৃণমূল নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। সেখানে মিলেছে বিভিন্ন সুত্র। আলিপুর আদালতের নির্দেশ, বিকেল ৩ টে থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সংশোধনাগারে গিয়ে তাঁদের দু’জনকেই জেরা করতে পারেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকরা’ স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে যতই তদন্ত এগোচ্ছে, ইডি ও সিবিআইয়ের হাতে ততই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসছেবলে জানা গেছে । ইতিমধ্যেই ইডির হাতে এসেছে কুন্তল ঘোষ ও শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় সংক্রান্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
এর ফলে তাঁদের কাছ থেকে মেলা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ার করে এবার নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত প্রসন্ন রায় ও প্রদীপ সিংকে জেরা করতে চায় সিবিআই। ইতিমধ্যেই এই দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের তরফ থেকে চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে আদালতে। সেখানে ১২ জনের নাম উল্লেখ করেছিল সিবিআই।
যার মধ্যে অন্যতম ছিল এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, এসএসসির প্রাক্তন সহকারি সচিব অশোক সাহা, এসএসসির প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা । টাকার বিনিময় চাকরি পাইয়ে দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, সেখানে আর কোন কোন প্রভাবশালী যুক্ত রয়েছেন? তা পরিষ্কারভাবে জানতে চায় সিবিআই।
প্রসন্ন ও প্রদীপ এজেন্ট বা লিংকম্যান হিসেবে কাজ করতেন। চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে যে প্রতারণা চলত, সেখান থেকে মোটা টাকার কমিশন তাঁরা পেতেন বলে সিবিআই তদন্তে জানতে পেরেছে ।সিবিআই সূত্রে প্রকাশ, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এখনও পর্যন্ত বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর অজানা রয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে। এই অজানা উত্তরগুলি খুঁজে বের করার জন্যই প্রসন্ন রায় ও প্রদীপ সিংকে সংশোধনাগারে গিয়ে জেরা করা জরুরি।
এজন্য গত ১৯ জানুয়ারি তারা আলিপুর আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। চলতি সপ্তাহে আলিপুর আদালত তাতে সম্মতি দিয়েছে।গ্রুপ সি মামলায় এই দুই মিডলম্যানকে জেরা করার অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল সিবিআই। প্রসন্ন রায় ও প্রদীপ সিংকে নবম-দশম শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। তবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি -‘ , গ্রুপ সি নিয়োগের সঙ্গেও যুক্ত তাঁরা’। অভিযোগ, টাকা সংগ্রহ ও প্রার্থী জোগাড় করার কাজ করতেন তাঁরা। জেরায় সন্তুষ্ট না হলে সিবিআই তাঁদের হেফাজতে নিতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত প্রসন্ন রায়ের সঙ্গে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সম্পর্ক রয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে প্রকাশ, তিনি (প্রসন্ন) পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ’। পার্থর ভাগ্নি-জামাই বলে সূত্রের দাবি। প্রসন্নর একটি গাড়ি ভাড়া দেওয়ার সংস্থা রয়েছে। সল্টলেকের জিডি ব্লকে রয়েছে অফিস। সেই অফিসের আড়ালে টাকা লেনদেন হতো বলেই তদন্তে উঠে এসেছে। আরও অভিযোগ, ‘গভীর রাতে টাকা ঢুকত ওই অফিসে। প্রসন্নর অফিসে একটি কালো রঙের বিলাসবহুল গাড়ি থাকত। ওই গাড়িটিকে ব্যবহার করেই টাকা আনা হত’।প্রসন্ন রায়ের সাথেসাথেই উঠে আসে প্রদীপ সিংয়ের নাম। এখন জেল হেফাজতে থাকা এই দুজন সিবিআইকে কতটা তদন্তে সহযোগিতা করে, এখন সেটাই দেখার।