পারিজাত মোল্লা: ফের দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েট দাখিল করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কলকাতা হাইকোর্টের কেন্দ্রীয় বাহিনী সংক্রান্ত রায় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েট দাখিল করলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী শুভেন্দু অধিকারী। গত বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে পঞ্চায়েত ভোটের জন্য ন্যূনতম ৮২ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান মোতায়েন রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
শুভেন্দুদের আশঙ্কা, এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে পারে রাজ্য সরকার এবং রাজ্যের নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে দেশের সুপ্রিম কোর্টে শুনানি যাতে একপক্ষ ভাবে রাজ্য বা কমিশনের বক্তব্য শুনে কোনও নির্দেশ না দেয়, তার জন্যই ক্যাভিয়েট দাখিল করে রাখলেন শুভেন্দু বলে জানা গেছে।
ক্যাভিয়েট দাখিল করার ফলে এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে উঠলে বিরোধী দলনেতার বক্তব্য শুনতে হবে সুপ্রিম কোর্টকে। চলতি পঞ্চায়েত ভোটের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা নিয়ে গত বুধবার বিরোধীদের মামলার শুনানি চলেছিল হাইকোর্টে। পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ পালন করা হয়নি এই অভিযোগে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেছিলেন বিরোধীরা।
বিজেপির তরফে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং কংগ্রেস নেতা আবু হাসেম খান চৌধুরী ওই মামলা করেন। যার শুনানির জন্য মামলা ওঠে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে।
গত বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মামলার শুনানির শুরুতেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে জানান, ‘বলতে বাধ্য হচ্ছি, এত কিছুর পরে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ থাকছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, কমিশনারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করতে হচ্ছে। আপনারা দয়া করে হাইকোর্টের নির্দেশ পালন করুন। চাপ সামলাতে না পারলে রাজ্যপালের কাছে গিয়ে বলুন, আর পদ ছেড়ে দিন। অন্য কাউকে তিনি ওই পদে বসাবেন। ওই পদের অনেক অনেক গুরুত্ব আছে।”
গত বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম শুনানি পর্বে বলেছিলেন, ‘এবারের পঞ্চায়েত ভোটের নিরাপত্তার জন্যও অন্তত ওই সংখ্যক ( ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন) বা তার বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।” কমিশন ২২টি জেলার জন্য যে ২২ কোম্পানি অর্থাৎ ২০০০-এর কিছু কম আধা সেনা মোতায়েনের কথা বলেছে, তা করলে চলবে না। আর এই বাহিনীর জন্য কমিশনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জানাতে হবে কেন্দ্রকে’।
গত ১৫ জুন কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, গোটা রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতেই পঞ্চায়েত ভোট করাতে হবে। শুধু তা-ই নয়, ওই নির্দেশের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রের কাছে বাহিনী চাইতেও হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে।
কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, হাইকোর্টের ওই নির্দেশ সত্ত্বেও বাহিনী আনার জন্য অনুরোধ করে কমিশনের তরফে যোগাযোগ করা হয়নি কেন্দ্রকে।
পরে অবশ্য গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন জানায়, গোটা রাজ্যের ২২টি জেলায় ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য কেন্দ্রকে অনুরোধ করেছে তারা।
কমিশনের সেই বক্তব্য ঘিরে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। কারণ গোটা রাজ্যে ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর ২০০০ জওয়ানের উপস্থিতি অবাধ শান্তিপূর্ণ ভোটের পক্ষে নয় বলে মনে করছে বিরোধীরা। সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে রাজ্য। তাই আগাম ক্যাভিয়েট দাখিল করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।