পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ চলে গেলেন ময়দানের চির তরুণ অলিম্পিক ফুটবল দলের প্রাক্তন ক্যাপ্টেন বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়। পোশাকি নাম সমর বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তার আসল নামটির থেকেও বদ্রু নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন ময়দানে। মোহনবাগান অন্তপ্রাণ মানুষটি আর জি কর মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করতে করতেই বাংলার ক্লাব ফুটবলে নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন। পঞ্চাশের দশকে মোহনবাগান ও বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায় ছিল সমার্থক শব্দ। পরপর বেশ কয়েক বছর মোহনবাগানকে লিগ শিল্ড ডুরান্ড ট্রফি উপহার দেবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ময়দানের এই প্রবাদপ্রতিম ফুটবল ব্যক্তিত্ব। হাওড়ার বালি থেকে মোহনবাগান, জাতীয় দল হয়ে ১৯৫৬ সালে মেলবোর্ন অলিম্পিকে ভারতীয় ফুটবল দলকে নেতৃত্ব দেওয়া যেন এক সোনায় মোড়া সফর ছিল তার। তার নেতৃত্বেই ১৯৫৬ সালের মেলবোর্ন অলিম্পিকে ভারত সেমিফাইনালে ওঠে। ভারতীয় ফুটবল দলের জন্য সেটাই প্রথমবার কোন অলিম্পিক সেমিফাইনালে যোগ্যতা অর্জন এবং শেষবার ও বটে। একটা সময় ভারতীয় ফুটবল বলতে উল্লিখিত হতো চুনি পিকে বলরাম বদ্রুর নাম।
ফুটবল থেকে অবসর নেবার পরও জীবনে কোনদিন অবসর যাপন করেননি ময়দানের এই প্রবাদপ্রতিম ফুটবল ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন কাজে নিজেকে নিযুক্ত রেখেছিলেন সমর বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার ফুটবলের উন্নতির জন্য বারবার চিন্তা করেছেন তিনি। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন তৈরীর পেছনেও যথেষ্ট অবদান ছিল বদ্রু বন্দোপাধ্যায়ের। একটা সময় এই স্টেডিয়াম তৈরির জন্য তৎকালীন ক্রীড়া মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী এবং ক্ষীতি গোস্বামীর সঙ্গে বাংলার কোনায় কোনায় ঘুরেছেন অর্থ সংগ্রহের জন্য। তৈরি হয়েছে স্বপ্নের যুবভারতী। বাংলার ফুটবলের উন্নতির জন্য ছোট ছোট ছেলেরা যাতে ছোট থেকেই স্কিলফুল হয়ে উঠতে পারে তার জন্য নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পরপর কয়েক বছর আয়োজিত স্কুল ফুটসাল টুর্নামেন্টের অন্যতম উৎসাহ দাতা ছিলেন ময়দানের প্রিয় বদ্রুদা। অজাতশত্রু মানুষটির বাড়িতেও ছিল সকলের অবাধ প্রবেশ অধিকার। কিছু বছর আগে তিনি মোহনবাগানরত্ন সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। ভারত সরকারও তাকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিয়েছিল। অলিভার কান যখন ভারতবর্ষে আসেন তাতে কিছুদিন আগেই পুত্র বিয়োগ হয় বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ছেলের মৃত্যু শোক সহ্য করেও এতগুলো বছর ধরে ময়দানের আনাচে-কানাচে বিভিন্ন কর্মকান্ডে যুক্ত থেকেছেন সমর বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফ বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার ভেটারেন্স ক্লাবেও তার ছিল অবাধ যাতায়াত। এই ক্লাবের সঙ্গে তার ছিল আত্মিক সম্পর্ক। বেশ কিছুদিন আগে যখন অসুস্থ হলেন পরিবারের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলো মোহনবাগান ক্লাবের সঙ্গে। ক্লাবই তাকে দায়িত্ব নিয়ে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। অ্যালজাইমারস, উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন সমর বন্দ্যোপাধ্যায়। দু সপ্তাহেরও বেশি সময় হাসপাতলে জীবন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে ৯২ বছর বয়সে হার মানলেন মৃত্যুর কাছে। রেখে গেলেন পুত্রবধূ ও নাতনিকে।