পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: সকালেই যেন আকাশ ঢেকেছে আঁধারে। চারদিকে ধুলোর মোটা আস্তরণ। গোটা রাজধানী যেন ধুলোবালির চাদরে আচ্ছাদিত। ক্রমশই স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকার। রাস্তায় বের হলেই চোখ জ্বালা থেকে শ্বাসকষ্ট! চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন এই সব কিছু মূলেই রয়েছে বায়ু দূষণ। দিল্লি সহ তার পার্শ্ববর্তী এলাকা নয়ডা সহ গ্রেটার নয়ডায় একই অবস্থা। ফলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অন লাইন ক্লাসের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এবার সরকারি ও বেসরকারি অফিসগুলিকে ওয়ার্ক ফর্ম হোমের সিদ্ধান্ত।
শনিবারও দিল্লির বায়ুর মান অত্যন্ত খারাপ ছিল। এছাড়াও এনসিআর এলাকা – নয়ডা এবং গুরুগ্রামে আজ সকাল ৭ টায় AQI ৫২৯ এবং ৪৭৮ একিউআই রেকর্ড করা হয়েছে। পশ্চিম দিল্লির ধীরপুরে একিউআই ছিল ৫৩৪। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর একিউআই ছিল ৪৭২।
বিগত তিনদিন ধরে দিল্লির বাতাসের গুণমান ‘গুরুতর’ খারাপ পর্যায়ে রয়েছে। রাজধানীর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতে অবস্থা আরও খারাপ। দূষণ মোকাবিলা করতে আজ থেকে দিল্লির প্রাথমিক স্কুলগুলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবার সরকারি কর্মীদেরও বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হল। বাতাসের গুণমান পরীক্ষক সংস্থা, সাফারের তরফে জানানো হয়েছে, এদিন সকালে দিল্লিতে বাতাসের গুণমানের সূচক ছিল ৪৩১। নয়ডায় বাতাসের গুণমান ছিল ৫২৯, গুরুগ্রামে তা ছিল ৪৭৮, গাজিয়াবাদে বাতাসের গুণমান ছিল ৪৪৬। অন্যদিকে, হরিয়ানার ফরিদাবাদেও বাতাসের গুণমান ছিল ৪৬৩। শুক্রবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান সাংবাদিক সম্মেলন করে কেন্দ্রীয় সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
দূষণের মাত্রা অতিরিক্ত হারে বাড়তে থাকায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল গতকাল সমস্ত প্রাথমিক স্কুলে ছুটি ঘোষণা করেন। পঞ্চম শ্রেণি থেকে পড়ুয়াদের ক্লাসরুমের বাইরের যাবতীয় কার্যকলাপেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
পাশাপাশি সরকারি দফতরের কর্মীদেরও ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-র নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপাতত ৫০ শতাংশ কর্মী অফিস থেকে এবং বাকি ৫০ শতাংশ কর্মী বাড়ি থেকে কাজ করবেন। বেসরকারি অফিসগুলিকে এই নির্দেশিকা অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, নয়ডা ও গ্রেটার নয়ডাতেও অষ্টম শ্রেণি অবধি পড়ুয়াদের আগামী ৮ নভেম্বর অবধি অনলাইনেই ক্লাস করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে দ্য কমিশন অফ এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টের তরফে চার স্তরীয় ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ গ্রহণ করা হয়েছে দূষণ প্রতিরোধে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে পুরনো ইঞ্জিনের ডিজেল গাড়ির চলাচল। শুধু মাত্র বিএস-৬ ইঞ্জিন যুক্ত এবং জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত যানবাহনের চলাচলেই ছাড় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বৈদ্যুতিক এবং সিএনজি চালিত ট্রাক ছাড়া অন্য ট্রাক দিল্লিতে প্রবেশ করতে পারবে না। দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে আপাতত হাইওয়ে, উড়ালপুল, ওভারব্রিজ, পাইপলাইন সহ যাবতীয় নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
আম আদমি পার্টির (আপ) দুই নেতাই দূষণের পিছনে পঞ্জাবে ফসলের গোড়া পোড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করে নেন। যা দিল্লির দমবন্ধ করে দেয়। কেজরি বলেন, ‘শুধুমাত্র দিল্লি এবং পঞ্জাব সরকার এই জন্য দায়ী নয়। এই সমস্যার জন্য দায়ী একাধিক স্থানীয় এবং আঞ্চলিক কারণও। কারণ বাতাস একটি রাজ্যে আটকে থাকে না।’ পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের মানুষকে আশ্বস্ত করে বলেন, আগামী বছর থেকে ফসলের গোড়া পোড়ানোর ঘটনা কমবে।