পুবের কলম, ওয়েব ডেস্কঃ মিলল না স্বস্তি! ভোটপর্ব শেষ হতেই ফের জেলবন্দি হলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। রবিবার বিকেল ৪টে ৫০ মিনিট নাগাদ তিহার জেলে আত্মসমর্পণ করলেন আপ সুপ্রিমো। লোকসভা ভোট শেষ হতেই ২১ দিন পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এ দিন ফের জেলবন্দি হলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। গত ১০মে আবগারি মামলায় অভিযুক্ত কেজরীকে অর্ন্তর্বতী জামিন দেয় অ্যাপেক্স কোর্ট।
এ দিন আত্মসমর্পনের আগে কেজরিওয়াল বিকেল ৩টে ২০ মিনিট নাগাদ রাজঘাটে যান। সেখানে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর। আপ নেতা স্ত্রী সুনীতা কেজরিওয়ালকে সঙ্গে নিয়ে যান হনুমান মন্দিরে। সেখানে প্রার্থনা করার পর বেরিয়ে বিকেল ৪টে নাগাদ দলীয় কর্মীদের সভায় অংশগ্রহণ করেন। দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে ভাষণে কেজরিওয়াল বলেন, “লোকসভা ভোটের প্রচারের জন্য সুপ্রিমকোর্ট আমাকে ২১ দিনের জামিন মঞ্জুর করেছিল। এরজন্য সর্বোচ্চ আদালতকে ধন্যবাদ। আজ আমি তিহার জেলে ফিরে যাচ্ছি। এই ২১ দিনে আমি ১ মিনিটও নষ্ট করিনি। শুধুমাত্র আপ নয় অনান্য দলের প্রচারের জন্য মুম্বাই, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ঝাড়খন্ড, জামশেদপুর গিয়েছি।” তিনি বলেন ” আপ দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ, আমার কাছে সবার আগে দেশ। আমি জেলে যাচ্ছি এই কারণে নয় যে আমি দূর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। আমাকে জেলে ফিরতে হচ্ছে তার কারণ এই যে আমি স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছি।” পাশাপাশি তিনি বলেন, ” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের সামনে স্বীকার করেছেন যে আমার বিরুদ্ধে তাঁর কাছে কোনও প্রমাণ নেই।”
কেজরী এ দিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, “লিখে নিন সমস্ত বুথ ফেরত সমীক্ষা মিথ্যা।” তিনি বলেন, একটি বুথ ফেরত সমীক্ষক সংস্থা রাজস্থানে বিজেপিকে ৩৩টি আসন দিয়েছে অথচ সেখানে লোকসভার আসন সংখ্যা ২৫।”
এ দিন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বর্তমান পরিস্থিতিকে গান্ধিজি ভগৎসিংদের লড়াই করার সময়ের সঙ্গে তুলনা করেন। পাশাপাশি তিনি মনে করেন বুথ ফেরত সমীক্ষার মধ্যে দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি গণনার কাজে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের ইঙ্গিত দিচ্ছেন বলেই মনে করেন কেজরী।
এ দিন ভাষণের শেষ দিকে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন আপ নেতা। তিনি বলেন, “আমি জানি না জেলে ফেরত যাওয়ার পর আমি আবার কবে ফিরবো। আমি জানি না জেলের মধ্যে আমার সঙ্গে কী করা হবে। কিন্তু আমি কোনও কিছুকে পরোয়া করি না। তাদের যা ইচ্ছা তারা তা করতে পারে। আমার প্রতিটি রক্তবিন্দু দেশের জন্য উৎসর্গ করেছি। ভগৎ সিং ফাঁসির দড়িতে ঝুলছেন আমিও প্রস্তুত।”
এ দিন বিকেল ৪টে ২৫ মিনিট নাগাদ কেজরিওয়াল দলের পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স কমিটির সঙ্গে সভা করেন। ৪টে ৩৫ মিনিট নাগাদ তিনি দলীয় কার্যালয় থেকে তিহারের উদ্দেশ্যে বের হন।
দলের সুপ্রিমোর আত্মসমর্পণ সম্পর্কে আপ মুখপাত্র প্রিয়াঙ্কা কক্কর সংবাদ সংস্থাকে বলেন, “আমাদের নেতারা কারাগারে আছেন কারণ বিজেপি আইন সংশোধন করেছে যে কাউকে কোনো প্রমাণ ছাড়াই কারাগারে রাখা যেতে পারে, আমরা জেলে যেতে ভয় পাই না। আমরা আশাবাদী যে আমরা সুপ্রিম কোর্ট থেকে ন্যায়বিচার পাব।”
অন্যদিকে বিজেপি নেতা মনোজ তিওয়ারি কেজরিওয়ালকে দিল্লির ভিলেন বলে উল্লেখ করার পাশাপাশি বলেন, “শহরে জলের সংকট। জল বিভাগ তাঁর অধীনে কিন্তু তিনি কখনও দিল্লির মানুষকে বিশুদ্ধ জল দেওয়ার চেষ্টা করেননি।” তিওয়ারি আপ নেতাকে কটাক্ষ করে বলেন, “আজ রাজ ঘাট পরিদর্শন করলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি যদি মহাত্মা গান্ধিকে অনুসরণ করতেন, তাহলে তাকে জেলে যেতে হতো না।”
উল্লেখ্য, শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আরও সাত দিনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে দিল্লির রাউজ অ্যাভিনিউ আদালতে দীর্ঘ শুনানি হয়। কিন্তু, তারপরেও হয়নি সুরাহা। এদিন দীর্ঘ শুনানির পর অবশেষে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেদন আগামী ৫ জুন পর্যন্ত রায় স্থগিত রাখেন বিচারক কাবেরী বায়েজা।