পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নায়ডু। শুক্রবার রাত ৩টে নাগাদ নাটকীয়ভাবে হানা দেয় জগন্মোহনের পুলিশ। শনিবার সকাল ৬টা নাগাদ এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। কয়েকশো কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে। এই গ্রেফতারির প্রতিবাদে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বারস্থ হয়েছে চন্দ্রবাবুর দল টিডিপি। শনিবার গ্রেফতারির পর নাইডু বলেছেন, ‘‘আমি কোনও দোষ করিনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশ এবং সিআইডির অভিযোগ, চন্দ্রবাবু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সে রাজ্যের সরকারি সংস্থা ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’-এর প্রায় ৩৭১ কোটি টাকার তহবিল নয়ছয় হয়েছে। চন্দ্রবাবুর পাশাপাশি, এই মামলায় তাঁর ছেলে তথা টিডিপি নেতা নারা লোকেশকেও শনিবার গ্রেফতার করা হয়। তাঁর গ্রেফতারিতে ক্ষোভে ফুঁসছে টিডিপি-র কর্মী ও সমর্থকেরা।
টিডিপি সূত্রে খবর, দলীয় কর্মসূচি উপলক্ষে অন্ধ্রপ্রদেশের নান্দিয়ালে ছিলেন চন্দ্রবাবু। একটি জনসভায় ভাষণ দেওয়ার পরে ভ্যানিটি ভ্যানে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। শনিবার ভোররাতে সেখানেই হানা দেয় সিআইডি এবং অন্ধ্র পুলিশ। সঙ্গে ছিলেন নান্দিয়ালের ডিআইজি রঘুরামি রেড্ডি। সকাল ৬টা নাগাদ চন্দ্রবাবুকেকে গ্রেফতার করে ভ্যানিটি ভ্যান থেকে বার করে আনা হয়।গ্রেফতারির পর চন্দ্রবাবুকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নান্দিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে বিজয়ওয়াড়া জেলে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। শনিবারই তাঁকে আদালতে পেশ করা হবে। রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন মত হলেই এখন চরম ব্যবস্থা নেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছে দেশজুড়ে। চন্দ্রবাবু নাইডু রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, তিনি অন্ধ্রপ্রদেশকে আধুনিক বানানোর পিছনে তারা যথেষ্ট অবদান আছে। মন্তব্য করেছেন আরজেডি নেতা মনোজ ঝা।
টুইটার তথা এক্স-এর মাধ্যমে রাজ্যবাসীকে বার্তাও দিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘গত ৪৫ বছর ধরে অন্ধ্র প্রদেশের মানুষের সেবা করে চলেছি। মানুষের জন্য আমি আত্মত্যাগ করতে প্রস্তুত। আমার জন্মস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশের মানুষের সেবা থেকে আমাকে কোনও শক্তিই বিরত রাখতে পারবে না।’ এই ঘটনার পর ™ুলিশ টিডিপি-র বড় মাপের নেতাদের কার্যত গৃহবন্দি করে রেখেছে। এখন রাজ্যে নেই মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডি। ব্যাক্তিগত কারণে লন্ডন সফরে রয়েছেন তিনি।
২০১৪ সালের ২ জুন অন্ধ্রপ্রদেশ পুনর্গঠন আইন অনুসারে, অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলা নিয়ে তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠিত হয়েছিল। কেন্দ্রের কাছে বিশেষ মর্যাদার দাবি করেছিলেন টিডিপি প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু। কিন্তু কেন্দ্র তাতে আমল দেয়নি। ফলে প্রতিবাদে ২০১৮ তে এনডিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। এতদিন আর নাইডুকে আলাদা করে মনে পড়েনি বিজেপির। কিন্তু ‘ইন্ডিয়া’ মহাজোট হওয়ার পর তারা টিডিপির সঙ্গে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিতে চাইছেন। ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সঙ্গেও বিজেপির সম্পর্কও ভালো।
আগামী বছর লোকসভার সঙ্গেও অন্ধ্রপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। টিডিপি তার মাটি শক্ত করছে। এই অবস্থায় জল মাপছে বিজেপি। ওয়াইএসএর কংগ্রেসকে টাইট দিতে এনডিএ-তে ফের ঢোকার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন চন্দ্রবাবু নাইডু। যে ৩৮ দলকে মোদি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তার মধ্যে টিডিপিও ছিল।
ওয়াইএসআর কংগ্রেসের প্রধান তথা অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডির সরকারের বিরুদ্ধে অপশাসনের অভিযোগ তুলে গত বছর থেকে ধারাবাহিক ভাবে জেলাওয়াড়ি যাত্রা শুরু করেছেন চন্দ্রবাবু।