জিশান আলি মিঞা ডোমকল: ঈদের বাকি আর মাত্র কয়েকটি দিন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত হয়নি ঈদের কেনাকাটা। গত দু’বছরের মতো এবছরও ঈদে নতুন পোশাক হবে কি-না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে অনেক পরিবারই। মুর্শিদাবাদের ডোমকল, ইসলামপুর, হরিহরপাড়া, জলঙ্গীর মতো এলাকার বহু প্রান্তিক পরিবারের অল্প বয়সী ছেলেরা ঈদে নতুন পোশাক কিনতে আইসক্রিম বিক্রি করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সমস্ত ছেলেদের বয়স কারও নয়-দশ, তো কারও আবার বারো-তেরো। কেউ তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে, কেউ আবার ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণীর পড়ুয়া। এইসব কচিকাঁচাদের দাবি, ঈদে নতুন পোশাক কিনতেই তারা আইসক্রিম, বরফ বিক্রি করছে। সাইকেলে করে প্লাস্টিক বা থার্মোকলের বাক্সে পলিথিনে মুড়িয়ে জেলার বিভিন্ন জায়গায়, পাড়ার অলিতে-গলিতে বরফ, আইসক্রিম বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে তাদের।
ডোমকলের বাসিন্দা শাহরুখ সেখ স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। বাবা সমিরুল সেখ কেরলে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। গত পরপর দু’বছর কাজ হারিয়ে বাড়িতেই ছিলেন তিনি। ফলে পরপর দু’বছর ঈদে হয়নি নতুন পোশাক। তবে করোনার দাপট কমতেই ফের ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন। ঈদের আগে সামিরুলের বাড়ি ফেরার কথা। কিন্তু নিজের ও ছোট বোনের জন্য পোশাক কিনতে প্রায় মাস খানেক ধরে বিকেল বেলায় বরফ, আইসক্রিম বিক্রি করছে শাহরুখ।
একইরকম অবস্থা হরিহরপাড়ার শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় জুনিয়র হাইলের ছাত্র রাকেশ সেখের। বাবা শুকুর সেখ পেশায় টোটো চালক। স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার তার। কিন্তু সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। ফলে তার ছেলে রাকেশও নতুন পোশাক কেনার টাকা যোগাড় করতে বিকেল হলেই বরফ, আইসক্রিম বিক্রি করছে। রোজার মাসে বরফ, আইসক্রিমের চাহিদাও রয়েছে বেশ। জানা গিয়েছে রাকেশ, শাহরুখদের মত অনেকেই আইসক্রিম বিক্রি করে দিনে এক থেকে দেড়শো টাকা রোজগার করছে। রাকেশ বলে, পরীক্ষার জন্য মাঝেমধ্যেই স্কুল বন্ধ থাকছে, মাঝেমধ্যে স্কুলকামাই করেও আইসক্রিম বিক্রি করছি। যা রোজগার হবে তা দিতেই সবার জন্য নতুন পোশাক কেনার ইচ্ছে রয়েছে। রাকেশের আব্বা শুকুর সেখ বলেন, অভাবের সংসার। ক’টা দিন আইসক্রিম বিক্রি করে ছেলে যদি নিজের রোজগারে নিজের নতুন পোশাক কিনতে পারে তারজন্য আর বাধা দিইনি। তবে এভাবে পয়সা রোজগারের নেশা চেপে বসলে তারা স্কুল ছুট হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি সামসুজ্জোহা বিশ্বাস বলেন, অভিভাবক ও শিক্ষকদের বলব তারা যাতে স্কুল ছুট না হয়ে পড়ে সেদিকে নজর রাখতে। খোঁজ নিয়ে ওই সমস্ত পড়ুয়াদের পাশে থাকারও আশ্বাস দেন তিনি।