পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ সম্প্রতি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের নেতা-কর্মীদের বার্তা দিতে মেগা-সমাবেশ করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে শীর্ষনেতৃত্ব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ব্লকস্তরের নেতারাও। কী আলোচনা হল, আগামী দিনের পরিকল্পনা কী, কিংবা নানা জায়গায় ইডি-সিবিআই হানা নিয়ে দল কি অবস্থান নিচ্ছে, এসব নিয়ে তৃণমূল নেতা ও অন্যতম মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদারের এক বিশেষ সাক্ষাৎকার। তৃণমূল ভবনে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আসিফ রেজা আনসারী
প্রথমে আপনার কাছে জানতে চাইব, সদ্য নেতাজি ইন্ডোরে দলের কর্মী সমাবেশ হল, তা থেকে দল কতটা উজ্জীবিত?
তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সবসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা শোনার জন্য মুখিয়ে থাকেন। সেইদিক থেকে নেতাজি ইন্ডোরের সমাবেশ অবশ্যই নেতা-কর্মীদের মনে নতুন উদ্যমের সঞ্চার করেছে। তাছাড়া আমাদের দল চলমান ও শৃঙ্খলাপরায়ণ। ফলে আগামীদিনে কীভাবে চলতে হবে, মানুষের জন্য কীভাবে কাজ করতে হবে, তার দিশা দেখাতে নেতাজি ইন্ডোরের সমাবেশ যথেষ্ট ইতিবাচক। প্রত্যন্ত গ্রামের থেকেও মানুষের উপস্থিতি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তায় সকলেই অনুপ্রাণিত হন।
এই সমাবেশে মূলত কী কী বার্তা দিলেন নেত্রী?
দলের নেতা-কর্মীদের আগামীদিনে চলার দিশা দেখালেন তিনি। একইসঙ্গে মানুষের পাশে থেকে কীভাবে আরও ভালো কাজ করতে হবে তার জন্যেও প্রেরণা জুগিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সামনের জানুয়ারি মাসে যে তালিকা তৈরি করবে নির্বাচন কমিশন, তার ভিত্তিতেই পঞ্চায়েত ভোট হবে। তাই ভোটার তালিকায় নাম তোলার কাজে সবাইকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান নেত্রী। ১৮ বছর হলে যেমন নাম তোলা যায় তেমনি ১৭ বছর হলেই এখন আবেদন করা যেতে পারে, সেইদিকেও নজর দিতে বলা হয়েছে। আর কেন্দ্রীয় এজেন্সির অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ নিয়েও নেত্রীর বার্তা আছে।
আপনারা প্রায়শই কেন্দ্রীয় এজেন্সি, মানে ইডি-সিবিআই নিয়ে সুর চড়ান, বিরোধীদের কিভাবে টার্গেট করা হচ্ছে সে বিষয়ে বলুন।
এ কথা দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার যে বিজেপি-বিরোধী রাজ্যগুলিতেই এজেন্সির তৎপরতা রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে বিরোধীদের ভয় দেখানো। সবাই বুঝে গিয়েছে, বিজেপি সমস্ত ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করেছে। এজেন্সিকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছে। কংগ্রেস আমলেও সিবিআই নিয়ে অভিযোগ ওঠেছিল, তবে এমন অবস্থা স্বাধীন ভারতে কখনই হয়নি। আরএসএস-বিজেপির মিলিত সরকার চাইছে ‘গণতন্ত্রমুক্ত ভারত’। সেখানে বিরোধী বলে কিছুই থাকবে না। আপনারা সবাই দেখছেন, বিগত ৮ বছরে সরকারি সব লাভজনক সংস্থা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, দেশের সম্পদ লুঠ করে বিদেশে পালাচ্ছে বিজেপি-ঘনিষ্ট ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি ভিভো কোম্পানি ৬২ হাজার কোটি টাকা লুঠ করেছে, সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে। বিজেপি বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে, অন্যদিকে দেশের সম্পদ লুঠ করার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
ইডি-সিবিআই না থাকলে তো অবৈধ কাজের তদন্ত হবে না, এ নিয়ে কী বলবেন?
তদন্ত করার জন্য যে এজেন্সির দরকার এটা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে তাকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিতে হবে। কিন্তু বিজেপি এটা চায় না। তারা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থেই এগুলি ব্যবহার করে। চিটফান্ডের মতো বর্তমানে অনলাইন গেমিং এসেছে। এইসব গেম বন্ধ করার জন্য পার্লামেন্টে বারবার বলা হলেও সাড়া দিচ্ছে না সরকার। এখানেও সুনির্দিষ্ট মতলব রয়েছে।
অনলাইন গেমিং এবং এজেন্সি নিয়ে বিজেপির উদ্দেশ্যটা কী?
সরকার একদিকে অবৈধ কাজে অলিখিত বৈধতা দিচ্ছে, অন্যদিকে বেআইনি টাকা রোজগারের পথ খোলা রাখছে। আসলে যারা মানুষের টাকা লুঠ করে বিজেপি অফিসে চাঁদা দেবে তাদের কিছুই হবে না। আর লাভের বখরা নিয়ে সমস্যা হলেও চালানো হবে ইডি-সিবিআই এবং ইনকাম ট্যাক্স হানা।
গণতন্ত্র বনাম বিজেপির কার্যকলাপ নিয়ে তৃণমূলের ধারণা কী?
এখানে তৃণমূলের বক্তব্য স্পষ্ট। আমরা মনে করি বিজেপি দেশের গণতন্ত্র ও সংবিধানিক কাঠামো নষ্ট করতে চাইছে। রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। রাম একজন রাজা-ও, সেই মতো রাজতন্ত্র কায়েম করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে বিজেপি। তাই বিভিন্ন রাজ্যে সরকার ভাঙা, ইডি-সিবিআই লাগিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। হিটলারি কায়দায় নির্বাচিত হয়ে মোদি-শাহ সেই গণতন্ত্রকেই খতম করতে চেষ্টা করছেন।
তাহলে দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কি?
এই দেশ থেকে গণতন্ত্র মুছে ফেলা যাবে না। একবার কেউ স্বাধীনতার স্বাদ পেলে তাকে আর শিকল পরানো যায় না। ফলে গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ বিজেপিকে পরাস্ত করবে। এ জন্য বিজেপি-বিরোধী শক্তিগুলিকে এক হতে হবে। আমার বিশ্বাস, ২০২৪ সালেই বিদায় ঘণ্টা বাজবে বিজেপির।
জাতীয় বিরোধী ঐক্যের মুখ হিসাবে কাকে দেখবেন?
বিরোধীরা যৌথ মঞ্চ গড়লে বা মিলিত হলে বিজেপির পরাজয় নিশ্চিত। বিরোধীদের তা করতেই হবে। বিহার বা মহারাষ্ট্রের ঘটনা আমাদের অনেক শিক্ষা দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বর্তমানে বিজেপির বিরুদ্ধে মাটি কামড়ে লড়াই করছেন। তাই একমাত্র তিনিই বিজেপি বিরোধী মুখ হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
মমতার পর তৃণমূলের নেতা হিসাবে কাকে প্রথমে রাখবেন?
অন্যদের সঙ্গে আমাদের তুলনা করলে হয় না। আমাদের দল শৃঙ্খলাবদ্ধ ও গতিশীল। আমাদের দলে পরবর্তী নেতৃত্বকে সামনে এগিয়ে দেওয়া হয়। সেই হিসাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়ে হাল ধরছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব ও অভিষেকের সেনাপতিত্ব আমাদের পথ দেখাবে।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বাংলাকে বঞ্চনার অভিযোগ রয়েছে, কেন্দ্র এটা কেন করছে?
রাজনৈতিকভাবে না পেরে বিজেপি রাজ্যগুলিকে ভাতে মারার চেষ্টা করছে। বিরোধী রাজ্যগুলি যাতে উন্নয়নের কাজ না করতে পারে তাতে প্রতিবন্ধকরা তৈরি করা ওদের উদ্দেশ্য। আর ‘ডবল-ইঞ্জিন’ সরকারের কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ও গণতন্ত্রে এমন করা বা ডবল-ইঞ্জিনের কথা বলা সংবিধান বিরোধী।