পুবের কলম, ওয়েবডেসস্ক: লোকসভা থেকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধির সাংসদ পদ খারিজের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপি। সরসরি এই দাবি তুলেছে গেরুয়া শিবির। বিষয়টি আপাতত লোকসভার অধিকারভঙ্গ কমিটির বিবেচনাধীন। ওই কমিটির চেয়ারম্যান বিজেপির সাংসদ সদস্য সুনীলকুমার সিং। বিজেপির পক্ষে এই দাবি জানিয়েছেন বিহার থেকে নির্বাচিত বিজেপি নেতা নিশিকান্ত দুবে। বিজেপি ইতিমধ্যেই এই প্রসঙ্গে স্পিকারকে একটি কমিটি গঠনের কথা বলেছে। এই বিষয়টি স্পিকারের এক্তিয়ারের বাইরে বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজেজু।
এদিকে কাশ্মীরে জানুয়ারি মাসে ভারত জোড়ো যাত্রা চলাকালীন সেই সময় যে যৌন নিপীড়ণের শিকারদের বিষয়ে রাহুল গান্ধি উল্লেখ করেছিলেন। এবার সেই বিষয় সমস্ত তথ্য চেয়ে রাহুলকে দিল্লি পুলিশ নোটিশ পাঠিয়েছে। এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, পুলিশ এই বিষয়ে রাহুল গান্ধির বক্তব্য ও সামাজিক মাধ্যমের পোস্টগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইছে।
অন্যদিকে, কেন রাহুল গান্ধির লোকসভা সদস্যপদ খারিজ করা উচিত, সে বিষয়ে তাঁর যাবতীয় বক্তব্য গত শুক্রবার নিশিকান্ত দুবে কমিটির বৈঠকে পেশ করেন। অপরদিকেরাহুল গান্ধি এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্য ইতিমধ্যেই কমিটির কাছে জমা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, আদানি হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন ও গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে বিবিসির তথ্যচিত্রের পর বিজেপি যে ‘ভারতবিরোধী চক্রান্তের’ অভিযোগে সরব, উপরাষ্ট্রপতিও সেই পথে হেঁটে রাহুল গান্ধির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। ভারত যখন জি-২০-এর সভাপতিত্ব করছে, তখনই দেশের কিছু মানুষ দেশকে এভাবে ছোট করছেন। সংবিধান ও সংসদকে কালিমালিপ্ত করছেন। কংগ্রেস অবশ্য উপরাষ্ট্রপতির সমালোচনা করতে ছাড়েনি।
দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছেন, চেয়ারম্যানের ভূমিকা ক্রিকেটের আম্পায়ারের মতো। শাসক দলের চিয়ারলিডারের নয়।
লোকসভার বাজেট অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদজ্ঞাপক প্রস্তাবের ওপর বিতর্কে অংশগ্রহণের সুযোগ নিয়ে রাহুল গান্ধিসহ বিভিন্ন বিরোধীদলীয় সদস্যরা শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছিলেন। বিজেপির দাবি, ওই ভাষণের মাধ্যমে কংগ্রেস নেতা প্রধানমন্ত্রীর অসম্মান করেছেন, কুৎসা করেছেন। নিশিকান্ত দুবেও সেই এক অভিযোগ করে রাহুলের বিরুদ্ধে সভার অধিকারভঙ্গের অভিযোগ আনেন। স্পিকার ওম বিড়লা তা বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে পাঠান। রাহুলকে শোকজও করা হয়।
রাহুল যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেশের ‘গণতন্ত্রহীনতা ও সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা’ নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
সব মিলিয়ে বিজেপি বলতে শুরু করেছে, দেশে তো বটেই, বিদেশেও রাহুল একনাগাড়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানহানি করে চলেছেন। এতে দেশের বদনাম হচ্ছে। এমনকি তিনি দেশের পরিস্থিতি উন্নয়নে বিদেশের সাহায্যও চেয়েছেন। সব মিলিয়ে গত শুক্রবারের অধিকারভঙ্গ কমিটির বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
নিশিকান্ত দুবে ওই বৈঠকে সুব্রক্ষ্মণ্যম স্বামীর সংসদ পদ খারিজের তুলনাটিও দাখিল করেন। ১৯৭৪ সালে উত্তর প্রদেশ থেকে জনসংঘের টিকিটে সুব্রক্ষ্মণ্যম স্বামী রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৬ সালে সুব্রক্ষ্মণ্যম স্বামীর বিরুদ্ধে অধিকারভঙ্গের নোটিশ আনেন তৎকালীন সংসদীয় মন্ত্রী ওম মেহতা। রাজ্যসভায় দীর্ঘ আলোচনার পর ১৯৭৬ সালের ১৫ নভেম্বর তাঁর সদস্যপদ খারিজ হয়ে যায়।