পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: গত বছর থেকে বিজেপি ১৪ আগস্ট ‘দেশভাগ বিভীষিকা স্মরণ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। চলতি বছরে ১৪ আগস্ট দেশভাগের জন্য দায়ী বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে বিজেপি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে।
সাত মিনিটের এই ভিডিওতে দেশভাগের সমস্ত দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর উপর।
ভিডিওতে দেখানো হয়েছে মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ’র দেশ বিভাজনের দাবির কাছে নতমস্তক হয়ে ছিলেন নেহরু।
এই ভিডিওর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছে কংগ্রেসও। কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ বলেছেন এই ধরনের ভিডিও প্রকাশের পেছনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘আসল উদ্দেশ্য’ সামনে এসেছে।
বিজেপি ইতিহাসের বিভীষিকাময় ঘটনাবলীকে ব্যবহার করে তাদের আজকের রাজনৈতিক লড়াইয়ে বাজিমাৎ করতে চাইছে। আধুনিক যুগের জিন্নাহ এবং সাভারকাররা ফের একবার দেশকে বিভাজনের পথে নিয়ে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, প্রতিবছর আমরা ১৪ আগস্ট ‘দেশভাগ বিভীষিকা স্মরণ দিবস’ হিসেবে পালন করবো যাতে দেশের মানুষ জানতে পারেন কীভাবে আমরা দেশভাগের যন্ত্রণায় একদা বিদ্ধ হয়েছি।
রবিবার ১৪ আগস্ট এই নিয়ে সকালেই ট্যুইট করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশভাগের সময় যারা নিজেদের জীবন বলিদান দিয়েছেন তাদের শ্রদ্ধা জানাই। বিজেপির ভিডিওতে দেখানো হয়েছে কীভাবে জন র্যাডক্লিফের মতো একজন মানুষ কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশভাগের সিদ্ধান্ত কার্যকর করলো যার ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে কোনও ধারণই ছিল না।
যাদের ভারতীয় সভ্যতা এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না তারা তিন সপ্তাহের মধ্যে সীমা রেখা টেনে মানুষকে বিভাজিত করেদিল যারা শতাধী ধরে এক সঙ্গে বসবাস করতেন।
ভিডিওতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এই বিভেদমূলক শক্তির বিরুদ্ধে যাদের উপর লড়াই করার দায়িত্ব ছিল ত’ন তারা কোথায় ছিলেন? এর উত্তরে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, দেশভাগের ট্রাজেডিকে ঘৃণা ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করা যায় না।
দেশভাগের পেছনে যে কারণ তুলে ধরছে বিজেপি তা অসত্য। কংগ্রেস এই নিয়ে বিজেপির সঙ্গে বিতর্কে যেতে প্রস্তুত। বাস্তব ঘটনা হল সাভারকার প্রথমে দ্বিজাতি তত্ত্বের অবতারণা করেছিলেন যাকে পূর্ণতা দিয়ে ছিলেন জিন্নাহ।
রমেশ বলেন, সর্দার প্যাটেল লিখে গেছেন ‘আমরা যদি দেশভাগ মেনে না নিতাম তাহলে ভারত বহু খণ্ডে বিভাজিত হত। দেশ ধ্বংস হয়ে যেত।’ রমেশ বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির কী মনে পড়ে জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি কংগ্রেস নেতা শরৎ চন্দ্র বসুর আপত্তি সত্ত্বেও বাংলাভাগের জন্য দায়ী। যখন দেশভাগের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল ত’ন শ্যামাপ্রসাদ মন্ত্রী ছিলেন।
সিন্ধু প্রদেশ এবং বাংলায় জিন্নাহর মুসলিম লিগের সঙ্গে জোট সরকার গঠন করেছিল জনসংঘ। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গান্ধি, নেহরু, প্যাটেলের ভাবাদর্শকে তুলে ধরে আজ দেশকে ঐক্যবদ্ধ রা’তে সচেষ্ট। ঘৃণা রাজনীতিকে আমরা পারজিত করবোই বলে মন্তব্য করেন রমেশ। বিজেপির ভিডিওতে নেহরুর পাশাপাশি দেশভাগের জন্য দায়ী করা হয়েছে কমিউনিস্টদেরও। বিজেপির মতে মুসলিমদের জন্য আলাদা দেশের মুসলিম লিগের দাবি সমর্থন করেছিল কমিউনিস্টরা।