আইভি আদক, হাওড়া: হাওড়া সালকিয়ার ঢ্যাং বাড়ির পুজো এবার ১৪৯তম বর্ষে পদার্পণ করল। হাওড়া স্টেশন থেকে সালকিয়া চৌরাস্তা পেরিয়ে বাবুডাঙ্গা মোড় এলেই ডান হাতে পড়বে শ্রীরাম ঢ্যাং রোড। হুগলি জেলার রাজহাটি নামক গ্রামের জমিদার শ্রীরাম ঢ্যাং মহাশয় ব্যবসা সূত্রে সালকিয়ায় আসেন। এখানে তিনি শুরু করেন লোহা ঢালাইয়ের কারখানা। পরে ১৪, ব্যানার্জি বাগান লেনের বসত বাড়িতে তিনি ঢ্যাং পরিবারের দূর্গাপূজা শুরু করেন ১৮৭৩ সালে। পরবর্তীকালে তিনি “শ্রী শ্রী দূর্গামাতা ও লক্ষীমাতা সহায়” নামে একটি এস্টেট চালু করেন। এখনও এই এস্টেট দ্বারাই পুজোর যাবতীয় কাজকর্ম ও খরচ পরিচালিত হয়।
এই পরিবারের দূর্গাপূজার প্রস্তুতি শুরু হয় জন্মাষ্টমীর দিন থেকে। ওইদিন ভোরে বাড়ির ছেলেরা গঙ্গাস্নান করে তুলে আনেন গঙ্গামাটি। নতুন কাঁচা বাঁশ ও গঙ্গামাটি পুজো করে শুরু হয় প্রতিমা গড়ার কাজ। বাড়ির ঠাকুরদালানেই সাবেক কাঠামোতে গড়া হয় প্রতিমা। ডাকের সাজের সাবেক একচালা প্রতিমার আদলই এখনও বজায় রেখেছেন পরিবার।
জন্মাষ্টমী থেকেই পুজোর নানা নিয়ম ও আচার পালন শুরু হয়। মহাষষ্ঠীর দিন সকালে হয় বেল-বরণ। ঘট স্থাপন করে চন্ডীপাঠের মাধ্যমে দিয়ে হয় দেবীর বোধন। মহাসপ্তমীর ভোরে বাড়ির পুরুষরা ও পুরোহিতেরা মিলে গঙ্গায় নবপত্রিকা (কলাবৌ) স্নান করিয়ে আনেন। গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকার নির্দিষ্ট মেনে যথাসময় নবপত্রিকা প্রবেশ হয় বাড়িতে।এরপর নবপত্রিকা তথা কলাবৌকে কনের সাজে টুকটুকে লাল বেনারসি শাড়ি ও সোনার গহনা পরিয়ে গণেশের পাশে স্থাপন করা হয়। এরপর মা দূর্গা ও গণেশের ঘট স্থাপন হয়। এবার মায়ের চক্ষুদান ও প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু হয়। এইসময় একটি ছাঁচি-কুমড়ো বলি দেওয়ার রীতি আছে। ঢ্যাং পরিবারের পুজোর এক বিশেষ নিয়ম আছে। সপ্তমীর সন্ধ্যায় ১২ জন ব্রাহ্মণকে লুচি, ফল, মিষ্টি ও দক্ষিণা দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়।
অষ্টমীর দিন অষ্টমী পুজোর শেষে ও সন্ধিপুজোর সময় ‘ধূনো-পোড়ানো’ হয়। বাড়ির মেয়ে-বৌরা সারিবদ্ধ হয়ে মায়ের সামনে বসে। তাদের দু’হাতে ও মাথায় একটি করে মাটির সরা বসানো হয়। তাতে কর্পূর জ্বালিয়ে ধূনো পোড়ানো হয়। এরপর ছোট থেকে বড় সবাই এই মহিলাদের কোলে বসে এবং মাকে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেয়।
অষ্টমীর দিন আত্মীয়-স্বজন ও লোক সমাগমে ভরপুর থাকে। নবমীর দিন পাঁচ রকমের ফল বলি দেওয়ার রীতি আছে। এদিন ‘কুমারী পুজো’ ও সবশেষে হোম হয়। এদিন সন্ধ্যা আরতির সময় বাড়ীর ছোট থেকে বড় সবাই ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ঠাকুর দালানে উপস্থিত থাকেন। রোজ সকালে ফল, মিষ্টি ও নারকেল নাড়ু দিয়ে মায়ের ভোগ দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় লুচি, নানা রকম মিষ্টি, ক্ষীর-রাবড়ী ইত্যাদি রোজ মায়ের ভোগ দেওয়া হয়। দশমীর দিন সকালে মায়ের পুজো শেষে ঘট নাড়িয়ে দিয়ে মায়ের বিসর্জন পর্ব শুরু হয়। এরপর হয় সিঁদুর খেলা। রাতে মাকে বরণ করে সালকিয়ার শ্রীরাম ঢ্যাং (ফুলতলা) ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন হয়।