উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়,জয়নগর : সুন্দরবনের স্কুল ছাত্রীদের ঋতুকালীন সুস্থতায় জোর দিয়ে ২য় বার জাতীয় পুরস্কার জিতলেন স্কুল পরিদর্শক কৃষ্ণেন্দু ঘোষ। স্কুল পরিদর্শক হিসেবে কাজ করতে গিয়েই গ্রামীণ এলাকায় ছাত্রীদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্যের নানা সমস্যা প্রত্যক্ষ করেন তিনি। সিদ্ধান্ত নেন, নিজের কাজের পাশাপাশি নজর দেবেন স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীদের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে। সেই মতো ছাত্রীদের হাতে নিয়মিত স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়। সেই সঙ্গে ঋতুকালীন স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়াতেও নেন নানা উদ্যোগ।আর এই কাজের জন্যই সম্প্রতি শিক্ষাজগতে নতুন অবদানের জাতীয় পুরস্কার পেলেন জয়নগর উত্তর চক্রের অবর স্কুল পরিদর্শক কৃষ্ণেন্দু ঘোষ। নতুন দিল্লির আম্বেদকর আন্তর্জাতিক কেন্দ্রে তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান।
এর আগে বর্ধমান জেলায় স্কুল পরিদর্শক থাকার সময়, সেখানকার আদিবাদী শিশুদের স্কুলছুট আটকে জাতীয় পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছিলেন কৃষ্ণেন্দু ঘোষ। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার জাতীয় পুরস্কার জিতলেন তিনি।স্কুল ছাত্রীদের নিয়ে কৃষ্ণেন্দুর কাজ শুরু হয় ২০১৮ সাল নাগাদ। তার কিছুদিন আগেই জয়নগর উত্তর চক্রের স্কুল পরিদর্শক হয়ে আসেন তিনি। কিছুদিন কুলতলি চক্রের স্কুল পরিদর্শকের অতিরিক্ত দায়িত্বও সামলাতে হয়েছিল তাঁকে।
কৃষ্ণেন্দু ঘোষ জানান, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামীণ এইসব এলাকায় কাজ করতে গিয়ে ঋতুকালীন স্বাস্থ্য নিয়ে ছাত্রীদের দুর্দশার ছবিটা সামনেতে চলে আসে আমার। স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার জানতেন না অনেকেই। জানলে ও আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের মেয়েদের কাছে তা ব্যবহার করার তেমন সুযোগ ছিল না। সংক্রমণ-সহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগতে হত তাদের। মাসের নির্দিষ্ট সময় স্কুলে আসত না অনেকেই। ক্ষতি হত পড়াশোনায়। ঋতুকালীন স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতাও ছিল না এলাকায়। নানা কুসংস্কার ঘিরে ছিল।এ সবের বিরুদ্ধেই লড়াই শুরু করেন কৃষ্ণেন্দু। প্রথমেই স্কুল ধরে ধরে সমস্ত ছাত্রীদের হাতে তুলে দেন স্যানিটারি ন্যাপকিন। কৃষ্ণেন্দুর দাবি, কয়েকবছর ধরে এলাকার প্রায় ২৫টি স্কুলের হাজারেরও বেশি ছাত্রীকে কয়েক হাজার স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই লকডাউনে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে স্কুল ছাত্রীদের ন্যাপকিন বিলি করেছেন কৃষ্ণেন্দু। সেই সময় স্কুল ছাত্রীদের পাশাপাশি বাড়ির অন্য মহিলাদের জন্যেও স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া হয়।
পাশাপাশি ঋতুকালীন স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজও চালিয়ে গিয়েছেন লাগাতার। এখনও কৃষ্ণেন্দুর উদ্যোগে স্কুলে এবং স্কুলের বাইরে নিয়মিত সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ চলছে। নিয়মিত বিলি করা হচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিনও।জাতীয় পুরস্কার কাজের উৎসাহ আরও বাড়িয়ে দিলো বলেই মনে করেন কৃষ্ণেন্দু। তিনি জানান, তার কাজ প্রথমে জেলা পরে রাজ্য স্তরে স্বীকৃতি পায়। তারপরেই বিবেচিত হয় জাতীয় পুরস্কারের জন্য। এবার এই পুরস্কারের জন্য গোটা দেশ থেকে তিন হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছিল বলে জানান তিনি। এই রাজ্য থেকে ছ’জনকে বাছাই করে দিল্লি ডাকা হয়েছিল। তার মধ্যে থেকে পুরস্কার জেতেন কৃষ্ণেন্দু ঘোষ।
কৃষ্ণেন্দু ঘোষ বলেন, “কাজ করতে গিয়ে সমস্যাগুলো চোখে পড়ে। সেগুলি সমাধানের লক্ষেই নতুন করে কাজ শুরু করি। এখন ও নিয়মিত সেই কাজ চলছে। পুরস্কার পেতে পারি ভাবিনি। তবে যে কোনও সম্মানই উৎসাহ বাড়িয়ে দেয়। আরও বেশি করে ছাত্র-ছাত্রীদের উপকারে কাজ করে যেতে চাই। আগামীদিনে জেলার অন্য এলাকাতেও এই কাজ ছড়িয়ে দেওয়া আমার লক্ষ্য।”আর তাঁর এই সাফল্য এ খুশি জয়নগর কুলতলি সহ সুন্দরবনের শিক্ষক মহল।