গত শুক্রবার ভোররাতে ইডি গ্রেফতার করে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। ওইদিনই তাঁকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। ১০ দিন ইডি হেফাজত দেওয়া হয়েছে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে আইনজীবী আনসার মণ্ডলের সঙ্গে কথা বললেন ‘পুবের কলম’-এর প্রতিনিধি বিপাশা চক্রবর্তী।
প্রশ্ন: জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে কী বলবেন?
উত্তর: ইডি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি। যে তিনটে সংস্থার নাম এই মামলায় উঠে এসেছে, সেই সংস্থাগুলির সঙ্গে মন্ত্রীর কোনও যোগাযোগ নেই। ইডি যে কারণে তাকে রিমান্ডে চেয়েছিল, তার জন্য কারণ দেখিয়ে উপযুক্ত তথ্য দিতে পারেনি। বাকিবুর রহমানের নাম উঠে এসেছে। বাকিবুর একজন ব্যবসায়ী। তার খাদ্য সংক্রান্ত ব্যবসা রয়েছে। বাকিবুরের কাছ থেকে এমন কোনও তথ্য পায়নি যে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে গ্রেফতার করতে হবে।
প্রশ্ন: জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মামলায় তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের নাম জড়িয়েছে, এই সম্পর্কে কী বলবেন?
উত্তর: জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মামলায় যে তিনটি কোম্পানির কথা বলা হচ্ছে, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে আর পাঁচজনের মতো ওই কোম্পানির ডিরেক্টর ছিলেন। ২০১৬-১৭ সালে ওই কোম্পানিগুলি তৈরি হয়। কিন্তু এখন তাঁরা সেই ডিরেক্টর পদে নেই। যদি ইডি দেখে সেই কোম্পানিগুলির সম্পত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি হয়েছে, সম্পত্তি সংক্রান্ত কোনও অসংগতি পায়, তাহলে মন্ত্রীর স্ত্রী ও মেয়ে-সহ ডিরেক্টরদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। তবে মন্ত্রীর স্ত্রী ও মেয়ে নিয়মিত তাদের আইটি রিটার্ন জমা করেন। কিন্তু কোনওভাবেই এই মামলায় ওই কোম্পানিগুলির ডিরেক্টর হিসেবে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নামে অভিযোগ আনতে পারে না ইডি। কারণ ওই সংস্থাগুলির সম্পর্কে মন্ত্রীর কোনও সম্পর্ক নেই।
প্রশ্ন: মন্ত্রীর নামে প্রমাণ নেই, তাহলে ইডি তাকে হেফাজতে নিল কিভাবে?
উত্তর: এখন আদালতে ভ্যাকেশন বেঞ্চ চলছে। আদালতে এক্তিয়ার ছিল না জামিন দেওয়ার। যদি জামিন দেওয়ার জুডিকশন থাকত, তাহলে জামিন পেয়ে যেতেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। কারণ বিচারক নিজেই জানিয়েছিলেন, এটি জামিন দেওয়ার মামলা। কারণ ইডি আদালতে বাকিবুর রহমানের যে তথ্য আদালতে জমা দিয়েছে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের তার সঙ্গে সম্পর্ক আছে সেটা প্রমাণ করতে পারেনি।
২০১৬-১৭ সালে যখন জ্যোতিপ্রিয় খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন, তাঁর উদ্যোগে রাজ্য সরকার মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাস করে মিল মালিকদের বিরুদ্ধে খাদ্য সংক্রান্ত মামলায় ব্যবস্থা নিয়েছিল। তদন্ত করে ১৪ কোটি টাকা উদ্ধার হয়।
প্রশ্ন: রাজ্যের পুলিশ সেই তদন্ত তাহলে মাঝপথে থামিয়ে দেয় কেন?
উত্তর: তদন্ত বন্ধ কিছু হয়নি, হয়তো ধীরগতিতে চলছে। আমি বলতে চাই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের স্বাক্ষর ছাড়া এই তদন্ত হত না। উনি নিজের উদ্যোগেই এই তদন্ত শুরু করেছিলেন। আমাদের এখানে প্রশ্ন ইডি কেন এই মামলায় পুলিশ প্রশাসন বা ভিজিল্যান্সকে কিছু জিজ্ঞাসা করল না? সেই সময়ের তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন রাখল না কেন ইডি? তাহলে তো ইডির সুবিধা হত। কাজেই এই সমস্ত দেখেই বোঝা যাচ্ছে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে গ্রেফতার করা রাজনৈতিক প্রণোদিত উদ্দেশ্য। এখনও পর্যন্ত জ্যোতিপ্রিয়র মামলায় ইডি কোনও তথ্য প্রমাণ পায়নি।
প্রশ্ন: আপনারা আদালতকে কি জানিয়েছিলেন?
উত্তর: ওরা (ইডি) ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। আমাদের তরফ থেকে আবেদন ছিল, একটা মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে, ওনার ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। সমস্ত তথ্য প্রমাণ দেখে বিচারক আমাদের আবেদনে সম্মতি দেন। মেয়ে খাবার নিয়ে যেতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
প্রশ্ন: একজন আইনজীবী হিসেবে পরবর্তী পদক্ষেপ?
উত্তর: ৬ নভেম্বর এই মামলার শুনানি আছে। আদালতে এখন পুজো ভ্যাকেশন চলছে। ইডির হেফাজতে যেহেতু মন্ত্রী রয়েছেন, তাই তাঁর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসকরার বন্দোবস্ত করবেন। ওখানে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন হবে। বিচারক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের শারীরিক অবস্থা দেখেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশঙ্কাকে সত্যি করেই উনি অসুস্থ হয়েছেন। অ্যাপোলো হাসপাতালে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পর্যবেক্ষণে মন্ত্রীর চিকিৎসকেরা রয়েছেন। ৬ তারিখ মন্ত্রী আদালতে উপস্থিত থাকতে পারবেন কি না, সেটা ইডি বিচার বিবেচনা করবে। ইডি আবার হেফাজতে নিয়ে বাকিবুরের সামনে বসাতে পারে। আপ্ত সহায়ক অভিজিৎ দাসের কাছ থেকে একটি মেরুন ডাইরি পেয়েছে, সেটি কোনও উপযুক্ত প্রমাণ নয়। তবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই মামলার কোনও মিল নেই।
আমরা আদালতকে জানিয়েছি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক শুধু একজন রাজ্যের মন্ত্রী নন, উনি আইনজীবী, বার কাউন্সিলের প্রাক্তন এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান। ইডির কাছে এই তথ্য ছিল না। আইনজীবীরা উদ্বিগ্ন। বার কাউন্সিলের তরফ থেকে প্রতিবাদ হতে পারে, তবে আইনের সম্মান জানিয়ে আমরা বিরত আছি।