পারিজাত মোল্লা: এবার আরও আইনী অস্বস্তিতে বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডল। বুধবার পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল সিবিআই এজলাসের নির্দেশে আসানসোল থেকে দিল্লিতে সরল গরু পাচার মামলা। অবশেষে এদিন ইডির আবেদন মঞ্জুর করল আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালত। যদিও গত দু’দিন আদালতে কড়া প্রশ্নের মুখে পড়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। তবে শেষপর্যন্ত তাদের আবেদনই মঞ্জুর করল আদালত। গরু পাচার মামলায় প্রথমে সিবিআই ও পরবর্তীতে ইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়ে এখন দিল্লির তিহার জেলে বন্দি রয়েছেন অনুব্রত মন্ডল। জেলবন্দি রয়েছেন, অনুব্রত কন্যা সুকন্যা মণ্ডল, প্রাক্তন দেহরক্ষী সায়গল, এনামুল হক এবং বিএসএফ কমান্ডার সতীশ কুমার।
আসানসোল সিবিআই আদালত থেকে গরু পাচার মামলাটি স্থানান্তরিত হল দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে। আসানসোল সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী গত দু’দিনের শুনানিতে ইডির আইনজীবীর কাছে যে তথ্য দেখতে চেয়েছিলেন, এদিন সেই তথ্য পেশ করেন ইডির আইনজীবী অভিজিত ভদ্র।
বুধবার আসানসোল আদালতে ২০০৫ সালে ১ জুলাই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের জারি করা নোটিফিকেশন পেশ করেন ইডির আইনজীবী। সেই নোটিফিকেশনে বলা হয়েছে, ‘আর্থিক দুর্নীতি মামলায় ৪৪/১সি ধারায় মামলা স্থানান্তরের আবেদন করতেই পারে ইডি’। যদিও এই আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করেন অনুব্রতর আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ। তিনি আবেদন করেন, ‘সিবিআইয়ের মামলা যত দিন না সমাপ্ত হচ্ছে, ততদিন যেন এই আবেদন স্থগিত রাখা হোক’। তবে সেই আবেদনে গুরুত্ব দেননি বিচারক। বরং ইডির সওয়ালে সন্তুষ্ট আদালত মামলা স্থানান্তরের নির্দেশ দেয় আদালত। এর আগের দু’দিন শুনানিতে কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল ইডিকে। বুধবার সেই মামলা শোনার পর বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী মামলা দিল্লির আদালতে স্থানান্তরের পক্ষেই রায় দিলেন। এর আগে দু’বার সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানি হয়েছে। কিন্তু বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং তাঁর প্রাক্তন দেহরক্ষী সহগল হোসেন সংক্রান্ত এই মামলায় প্রশ্নের মুখে পড়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি।
কেন এই মামলা আসানসোল থেকে দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে যেতে চান? আগের দু’বার বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর এই প্রশ্নে ইডির আইনজীবী অভিজিত্ ভদ্র যে সওয়াল করেন, তাতে সন্তুষ্ট হয়নি আদালত। বিচারক জানতে চেয়েছিলেন, ‘কোন আইনে এবং কে এই মামলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অধিকার সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়েছে’। বুধবার ওই মামলার শুনানিতে ২০০৫ সালের জারি করা অর্থ মন্ত্রকের একটি বিজ্ঞপ্তি হাতিয়ার করে সওয়াল করে ইডি। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আর্থিক দুর্নীতি মামলায় তদন্তে নেমে ৪৪/১সি ধারায় মামলা স্থানান্তরের আবেদন করতেই পারে ইডি। যদিও এই আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করেন অনুব্রতর আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ। তিনি আবেদন করেন, সিবিআইয়ের করা মামলা যত দিন না শেষ হচ্ছে, তত দিন যেন এই আবেদন স্থগিত রাখা হয়।
প্রসঙ্গত, গরু পাচার মামলায় এখন তিহাড় জেলে বন্দি অনুব্রত মন্ডল এবং সাইগল। একই মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন অনুব্রতের মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল। এছাড়া আগেই গ্রেফতার হন এনামুল হক এবং বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমার। গত ২৮ জুলাই আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে ইডির তরফে ৪৪(১/সি) নম্বর ধারায় এই মামলা স্থানান্তরের জন্য আবেদন করে ইডি। দুই দফায় ঘণ্টা দেড়েক ধরে ইডির আবেদনের ভিত্তিতে এই মামলার শুনানি হয়। তৃতীয় বারের শুনানিতে ইডির আর্জি গ্রহণ করল আসানসোল আদালত। এখন দেখার এই নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট কিংবা দিল্লি হাইকোর্টের দারস্থ হন কিনা অনুব্রত?