আহমদ হাসান ইমরান: অঙ্কিতা ভান্ডারির মর্মান্তিক হত্যা এখন সারা দেশে আলোচিত হচ্ছে। কারণ, এটা কোনও সাধারণ হত্যা নয়। একজন গরিব কিন্তু আত্মমর্যাদাসম্পন্না সদ্য তরুণী চেয়েছিল তার দরিদ্র পরিবারকে সাহায্য করবে। তার আশা ও স্বপ্ন ছিল, সে জীবনে উন্নতি করবে। তাই ১৯ বছরের অঙ্কিতা লেখাপড়ায় সাময়িক ছেদ টেনে রিশেপসেনিস্টের কাজ নিয়েছিল একটি রিসর্টে। হয়তো এই রিসর্টে চাকরি নেওয়ার পিছনে তার ভাবনা ছিল, রিসর্টটি বিজেপির একজন নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী বিনোদ আর্যের। রিসর্টটি পরিচালনা করত তাঁর পুত্র পুলকিত আর্য। পুলকিত বিজেপির দাপুটে সদস্য ছিল।
অঙ্কিতা হয়তো ভেবেছিল, যেহেতু রিসর্টটি বিখ্যাত এক রাজনৈতিক নেতার সম্পত্তি, তাই হয়তো সেখানে পাওয়া যাবে নিরাপত্তা, মর্যাদা ও উন্নতির সুযোগ।
কিন্তু অনভিজ্ঞ তরুণী অঙ্কিতা ভুল ভেবেছিল। আসলে রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে পুলিশ প্রশাসনকে হাতে নিয়ে ওই রিসর্ট হয়ে উঠেছিল অনৈতিক ব্যবসার আখড়া, সস্তায় টাকা উপার্জনের জন্য পতিতাবৃত্তির কেন্দ্র। মূলত ধনী ও প্রভাবশালী পিতার সন্তান পুলকিত আর্যই দেখতো ‘এই ব্যবসা’।
পুলকিত তার অধীনে কর্মরত রিশেপসনিস্ট সদ্য তরুণী অঙ্কিতাকেও পতিতাবৃত্তিতে নামার জন্য চাপ দিতে থাকে। প্রলোভন দেয়, সে তার ‘অতিরিক্ত সার্ভিস’র এর জন্য প্রতি রাতে ১০ হাজার টাকা করে পাবে।
কিন্তু দরিদ্র হলেও অঙ্কিতা টাকার প্রলোভনে এই অনৈতিক কাজে নামতে রাজি হয়নি। সে হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজে তার বন্ধুদের লেখে, এরা আমাকে ‘প্রসস্টিটিউট’ বানাতে চায়। কিন্তু আমি টাকার লোভে কখনই এ ধরনের কাজ করব না।
বোঝা যায়, এখনও অঙ্কিতারা রয়েছে। এখনও শালীনতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ এগুলির শেষ হয়ে যায়নি। যদিও বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলি টেলিভিশন, সংবাদপত্র, ইন্টারনেট এবং ম্যাগাজিনে সমানে শুধু অশ্লীল ছবি নয়, বরং মূল্যবোধহীন অনৈতিক জীবনে প্রচার করে চলছে। তাকে মোহময় করে দেখাচ্ছে। কিন্তু আখেরে এতে ক্ষতি হয় সমাজের। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয় মেয়েদের।
তাই দেখা যায়, মডেল, বিউটি ক্যুইনরা ড্রাগে আসক্ত হচ্ছেন। একের পর এক আত্মহত্যা করছেন। উত্তরাখণ্ডের অঙ্কিতা এই প্রলোভন ও অনৈতিকতার বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল। এটা কিন্তু বরদাশ্ত হয়নি উত্তরাখণ্ডের সমাজের প্রভাবশালীদের। তারা অঙ্কিতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে।
এখন বেশ কিছু তথ্য জানা যাচ্ছে। হতভাগ্য অঙ্কিতাকে তার প্রথম মাসের মাইনেও দেওয়া হয়নি। আর এই হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ লোপাটের জন্য নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। চেষ্টা করা হচ্ছে প্রভাবশালী বড়লোকদের জন্য পতিতা-ব্যবসার যে আয়োজন ছিল, তারও প্রমাণ বিনষ্ট করা। তাই কথা নেই, বার্তা নেই, আইন-আদালতের কোনও আদেশ নেই, বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় কুখ্যাত ওই রিসর্টটি।
অঙ্কিতার পরিবারের দাবি, সমস্ত প্রমাণ বিনষ্ট করার জন্য এই রিসর্টটিকে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পরে অবশ্য জানা যায়, পুলকিত ও তার বাবার এই ধরনের আরও ৫টি বেআইনি রিসর্ট রয়েছে।
সবশেষে আমরা অবশ্যই স্যালুট জানাব ওই ১৯ বছরের তরুণী অঙ্কিতাকে। তার সাহস ও মূল্যবোধ আমাদের শুধু প্রেরণাই জোগায় না, বরং এক নতুন সমাজ গড়ার জন্য প্রণোদিত করে।