সুবিদ আবদুল্লাহ্ঃ দ্রৌপদীর ভারতে ভালো নেই আদিবাসী শিশুরা। ভালো নেই আদিবাসীস্কুলপড়ুয়ারা। যে বয়সে স্কুলও খেলার মাঠ দাপিয়ে বেড়ানোর কথা সে বয়সে দিনমজুরি করে অন্ন জোটাতে হচ্ছে তাদের। সংসারের হাল ধরতে ßুñলছুট হয়ে কেউ হয়ে যাচ্ছে শিশু শ্রমিক, কেউ বা পরিযায়ী শ্রমিক। স্কুলছুট হয়ে আদিবাসী সমাজের শৈশব চুরি যাচ্ছে বলা যায়।
উত্তর দিনাজপুর জেলার করনদিঘি ব্লকের স্কুলগুলোতে আদিবাসী পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুললছুটের সংখ্যা বেশি। এই ব্লকের আলুদোহা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহশিক্ষক শহীদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তাঁর স্কুলে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করলেন।
তিনি জানান, পড়তে চেয়ে তাঁর স্কুলে হঠাৎ হাজির গণেশ হাঁসদা। আট মাস ধরে সে স্কুলছুট ছুট ছিল। আদরে কাছে ডেকে জানতে চাইলাম, কেন সে স্কুলে আসেনি? প্রশ্নশুনেই ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দেয় গণেশ। ‘স্যার, আমি পড়তে চাই। কাজ করতে চাই না। স্কুলে ভর্তি করে নিন আমাকে।’ অবাক হন গণেশের কথায়। মাথায় আদর মাখানো হাত রেখে বলেন, ‘এটা তোরই স্কুল প্রথম শ্রেণি থেকে পড়িস। নতুন করে ভর্তি হবি কেন? তুই তো এই স্কুলেই ভর্তি আছিস। পঞ্চম শ্রেণিতে। চল, ক্লাস কর বন্ধুদের সঙ্গে।’ সহপাঠিদের সঙ্গে বসিয়ে ক্লাস শুরু করেন শিক্ষক।
দুপুরের মিড-ডে মিল খেয়ে আবার কথা শুরু। গণেশের কথা শুনে থ-হয়ে যান শিক্ষক। জানা গেছে, গণেশের মা নেই। বাবা পরিযায়ী শ্রমিক। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন ভিন রাজ্যে। মাকে হারিয়ে অকালে অনাথ গণেশ আশ্রয় পেয়েছে মাসির কাছে। চতুর্থ শ্রেণিতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও গণেশের পঞ্চম শ্রেণিতে আর পা রাখা হয়ে ওঠেনি। কারন, মাসি চায় না গণেশ আর পড়াশোনা করুক। ‘নুন আনতে পানতা ফুরনো’ সংসার মাসির। মাসি চায়, বছর দশের গণেশ দিনমজুর খেটে মাসির সংসারের হাল ধরুক। মাসির কথায় দিনমজুর খাটতে শুরু করে গণেশ। দিনমজুরি করে বাড়ি ফিরে এসে স্কুলের জন্য মন খারাপ হয়। পড়াশোনার নেশা কাটেনি ওর মাথা থেকে। পড়ার নেশায় হঠাৎই গণেশ স্কুলেএসে হাজির হয়। শিক্ষক শহীদুল সাহেব সহশিক্ষকদের বিষয়টি জানান। যোগাযোগ করা হয় গণেশের মাসির সঙ্গে। গণেশের মাসি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন, বোনপো পড়তে চাইলে তিনি কোনও বাধা দেবেন না।শহীদুল ইসলাম জানান, গণেশের বাবা জিতেন হাঁসদার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। তিনি ছেলের পড়াশোনা ও খাওয়া খরচ বহন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।