পারিজাত মোল্লা: শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে আইনী ধাক্কা খেলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সুপ্রিম কোর্টে তাঁর জোড়া আবেদন ছিল।এক, কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাস বদল, দুই, ওই বিচারপতির পর্যবেক্ষণ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ না হওয়া। কলকাতা বিচারপতি অম়ৃতা সিনহার বেঞ্চ থেকে নিয়োগ মামলা সরানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিচারপতি সিনহা মামলার শুনানি চলাকালীন যে ধরনের পর্যবেক্ষণ জানাচ্ছিলেন, তা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ায় তাঁর মানহানি হচ্ছে বলেও সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তবে এদিন সেই অভিষেকের সেই আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না তাঁর নির্দেশে জানিয়ে দিয়েছেন, -‘মামলা সরানোর ব্যাপারে কোনও নির্দেশ দেবে না সুপ্রিম কোর্ট।
বিচারপতি যে পর্যবেক্ষণ জানাচ্ছেন, তা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের ব্যাপারে কোনও নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হবে না’।নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্ত সূত্রে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সম্পত্তির খতিয়ান আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। চলতি সপ্তাহে মুখবন্ধ খামে ৫ হাজার পৃষ্ঠার রিপোর্ট আদালতে পেশ করেছে ইডি। তার পরই বিচারপতি সিনহা ইডিকে প্রশ্ন করেছিলেন, -‘ সম্পত্তির পরিমাণ যদি কম হত, তাহলে কি এত নথি জমা পড়ত? এই সব সম্পত্তির জন্য আয়ের উত্স্য কী তা কি খতিয়ে দেখা হয়েছে? দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ সম্পত্তি ২০১৪ সালের পর হয়েছ। ঘটনা চক্রে সেই সময়েই নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছিল। এ ব্যাপারটা কি তদন্ত করে দেখা হয়েছে?’বিচারপতি অমৃতা সিনহার সেই সব পর্যবেক্ষণ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আবার কলকাতা হাইকোর্টের ইউটিউব চ্যানেল থেকে সেই ফুটেজ সংগ্রহ করে সোশাল মিডিয়ায় তা ছড়াতে শুরু করেছেন অনেকেই।
এ ব্যাপারে আপত্তি করে অভিষেকের আইনজীবী এদিন সুপ্রিম কোর্টে একটি পাঁচ পৃষ্ঠার রিপোর্ট জমা দেন।অভিষেকের আইনজীবী বলেন, -‘এই ধরনের পর্যবেক্ষণ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় তাঁর মক্কেলের সম্মানহানি হচ্ছে’।সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না অবশ্য সব শুনে বলেন, -‘কলকাতা হাইকোর্ট কোনও নির্দেশ দিলে সুপ্রিম কোর্ট তা বিবেচনা করে দেখতে পারে।
কিন্তু বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে কী বলছেন তা শীর্ষ আদালতের কাছে বিবেচ্য নয়। তাই কোনও পর্যবেক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে শীর্ষ আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাতেও হস্তক্ষেপ করা হবে না’।অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাবা-মা সহ লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সমস্ত বর্তমান ও প্রাক্তন ডিরেক্টর তথা অধিকর্তাকে তাঁদের সম্পত্তির হিসাব পেশ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা।
কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চে ওই রিপোর্ট গত বৃহস্পতিবার পেশ হয়েছে। আগামী ২০.ডিসেম্বর এই মামলার আবার শুনানি হতে পারে বিচারপতি সিনহার এজলাসে। তার আগে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন অভিষেক। কিন্তু তাঁর আবেদন গ্রাহ্য হল না।তবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এদিন জানিয়েছেন, হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের কোনও নির্দেশ নিয়ে অভিষেকের বক্তব্য থাকলে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করতেই পারেন। তাতে কোনও বাধা নেই।এখন দেখার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দারস্থ হন কিনা অভিষেক?