পারিজাত মোল্লা: টানা একমাস রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত কলকাতা হাইকোর্টে এজি পদে কেউ নেই, যা রাজ্যের আইনমহলে নজিরবিহীন বলে মনে করছেন অনেকেই। বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলায় বিচার-প্রক্রিয়ায় এজন্য দীর্ঘসূত্রতা ঘটছে। সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের কাছেও যা একপর্যায়ে হয়রানি বলা যায়।সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ছিল একশো দিনের কাজ নিয়ে জনস্বার্থ মামলার শুনানি। এদিন শুনানি সম্পূর্ণ হয়নি। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) পদ ফাঁকা থাকার কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম।
এদিন প্রধান বিচারপতি জানান, -‘মনে হচ্ছে রাজ্যের এজি নেই বলে সমস্যা হচ্ছে। যাই হোক, রাজ্যের কৌঁসুলি (গর্ভর্মেন্ট প্লিডার)-কে বিষয়টি অবগত করা হোক।অন্য আইনজীবী বা বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হোক রাজ্যের পক্ষ থেকে’।,উল্লেখ্য, গত ১০ নভেম্বর বর্ষীয়ান আইনজীবী সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় রাজ্যের এজি পদ থেকে ইস্তফা দেন। তার পর থেকে ওই পদটি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সোমবার আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সওয়াল করেন, ১০০ দিনের বকেয়া টাকা আটকে রয়েছে। এর ফলে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা মজুরি পাচ্ছেন না। আদালত আগে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু এখন শুনানি হচ্ছে না। মামলাটির দ্রুত শুনানি করা হোক।
কারণ, গরিব মানুষ কাজ করে টাকা পাচ্ছেন না। একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা সংক্রান্ত দু’টি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। এর মধ্যে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন রাজ্যের বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অন্য মামলাটি করেছিল পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত মজদুর সমিতি। তবে দু’টি জনস্বার্থ মামলার বিষয় ছিল ভিন্ন। শুভেন্দু জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগে। মজদুর সমিতি মামলা করেছিল পাওনার দাবিতে।
শুভেন্দুর করা সেই মামলারও শুনানি হয় এদিন ।কলকাতা হাইকোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় পদত্যাগ করতেই রাজ্যের নতুন এজি হিসাবে উঠে এসেছে প্রাক্তন এজি কিশোর দত্তের নাম। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে রাজ্যের তরফে নাম পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে। তবে তাতে এখনও সই করেননি সিভি আনন্দ বোস। খবর এইরকমই। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পশ্চিমবঙ্গের অ্যাডভোকেট জেনারেলের দায়িত্ব সামলেছিলেন প্রবীণ আইনজীবী কিশোর দত্ত। ধনখড় আমলে করেছিলেন পদত্যাগ। এবার ফের তাঁকেই পুরনো পদে বহাল করা হতে পারে বলে জানা গেছে। কয়েকদিন আগেই নতুন অ্যাডভোকেট জেনারেল হিসাবে কিশোর দত্তের নাম রাজ্যপালের কাছে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছিল নবান্ন। যদিও বেশ কিছু রিভিউয়ের জন্য ফের তা রাজ্যের কাছে পাঠিয়ে দেন রাজ্যপাল। সেই রিভিউ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফের সেই নাম রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। যদিও রাজ্যপাল এ নিয়ে সম্প্রতি বলেন, -‘রাজ্যের তরফ থেকে অ্যাডভোকেট জেনারেলের নাম পাঠানো হয়েছে। আমি এখনও সই করিনি। সই করার পর নামটি জানানো হবে’।কিন্তু, সেই ঘোষণা করা হবে ওইদিন সে বিষয়ে বিশেষ খোলসা করেননি রাজ্যপাল। বোসের সইয়ের পরেই রাজভবন থেকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। প্রসঙ্গে, দায়িত্বে থাকার সময়েই রাজ্যের হয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলা সামলেছিলেন এই প্রবীণ আইনজীবী। তালিকায় ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস মামলা, তেমনই আবার ছিল নারদ মামলাও।
এজি পদে কিশোর দত্তের নিয়োগ পত্র দিতে পারেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সূত্রের খবর, কিশোর দত্তর নামেই নবান্ন থেকে রাজভবনে ফাইল পাঠানো হয়েছে। ফাইল হাতে পাওয়ার পরেই কিশোর দত্তের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়ে নবান্নের কাছে ফের ফাইল পাঠায় রাজভবন। বিস্তারিত তথ্য সহ সেই ফাইল পুনরায় রাজভবনে পৌঁছেছে।প্রবীণ আইনজীবী সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় একমাস আগে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে এজি পদ থেকে ইস্তফা দেন। লন্ডন থেকে ইমেল করে রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠান তিনি। তারপরই এজি পদের জন্য কিশোর দত্তের নাম শোনা যায়। যিনি রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল।
২০২১ সালে ব্যক্তিগত কারণে ওই পদে ইস্তফা দেন কিশোর দত্ত। তিনি পুনরায় নিজের পদ ফিরে পেতে চলেছেন বলে খবর।কিন্তু, ব্যক্তিগত কারণ দেখালেও ২০২১ সালের ভোট পরবর্তী মামলায় রাজ্যের হয়ে খুব বেশি শক্তপোক্ত সওয়াল জবাব করতে পারেননি কিশোর দত্ত । সেকারণেই তাঁকে সরে যাওয়ার কথা বলা হয় বলে আইনজীবী মহলে অনেকেই মনে করছেন । এদিকে একমাস কেটে গেলেও, নতুন এজি না থাকা দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করছেন আইনজীবী মহল। কারণ, বাইরের আইনজীবী দিয়ে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি চলছে কলকাতা হাইকোর্টে। যা একেবারেই কাম্য নয় বলে মনে করছেন তাঁরা। অন্যদিকে, আড়াই বছর আগে পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া কিশোর দত্তকে এজি পদে ফেরানো নিয়ে শাসক দলই বিব্রত বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল । ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেও সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় লন্ডন থেকে ফিরে মুখ খোলেন।
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁর কথায়, ” আমি পদত্যাগ করছি, বা আমাকে সরানো হতে পারে বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর চাউর হয়। তার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি। তখনই বিষয়টি স্পষ্ট হয় , সরকার চাইছেন আমি সরে যাই । তাই, পদত্যাগ করি।”কোনও সরকারি প্রতিনিধিকে দিয়ে পরিকল্পনা মাফিক এমনটা করানো হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রাক্তন এজি। এবার তাঁর জায়গায় পুনরায় কিশোর দত্ত ফিরছেন কি না? তা নিয়েও জল্পনা চলছে কলকাতা হাইকোর্ট পাড়ায়।