পুবের কলম প্রতিবেদক: কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিন রাজ্যের ভোটের ফলাফল নিয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর প্রথম প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ী দলকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি, পরাজিতদের ভুল-ত্রুটিও শুধরে নেওয়ার বার্তা দেন। সোমবার কলকাতা ছাড়ার আগে বিজেপিকে রোখার ক্ষমতা যে কংগ্রেসের একার নেই, সেকথা একরকম স্পষ্ট করে দিয়ে কংগ্রেসের তিন রাজ্যে বিপর্যয় প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, “কংগ্রেসের একলা চলো নীতিতেই তিন রাজ্যে বিধানসভা ভোটে ভরা ডুবি।”
এদিন বিমানবন্দরে চার রাজ্যের বিধানসভা নিরাচনের ফল নিয়ে অভিষেক বলেন, “যাঁরা জয়ী, তাঁদের শুভেচ্ছা। পরাজিতদের বলব, ভুল সংশোধন করে পরবর্তী সময়ে আরও শক্তিশালী হয়ে লড়াই করতে হবে।” একইসঙ্গে, কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে অভিষেক বলেন, “কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্ব আত্মতুষ্টিতে ভুগছে। প্রথম দিন থেকে বলছি, যে যেখানে শক্তিশালী, তাঁকে সেখানে লড়তে দেওয়া হোক। সেটা করলেই হয়ত এই বিপর্যয় হত না।” তিনি আরও বলেন, কংগ্রেসের উচিৎ নিজেদের ভুল ত্রুটি পর্যালোচনা করা। প্রতিভাবানদের সুযোগ দেওযা হয় না। ভুল সংশোধন যদি আগে করা হত, এটা হত না। রাজস্থানে ২ শতাংশে হেরেছে। এটা কিছু না। মতানৈক্য আগে শুধরে নিলে এমনটা হত না।
অভিষেকের মতে, “কংগ্রেসের যে অন্যদের পাশে সরিয়ে রেখে চলার মানসিকতা, তা যদি ৬ মাস, এক বছর আগে সংশোধন করে নিত, তাহলে এমনটা হতো না।” এবিষয়ে তৃণমূলের উদাহরণ টেনে অভিষেক আরও বলেন, “আমরাও তো নিজেদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি। ২০১৯-এ ভালো ফল হয়নি। কোথায় কী ভুলত্রুটি ছিল, তা বুঝে একুশে পদক্ষেপ নিয়েছি, জিতেওছি।”
শুধু, কংগ্রেসকেই নয়, বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতিকেও কটাক্ষ করেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘ইন্ডিয়া’র ভবিষৎ মানুষ ঠিক করবে। যাঁরা ধর্মকে হাতিয়ার করে রাজনীতি করে আমি মনে করি তাঁরা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া। এই রাজনীতি চিরস্থায়ী হয় না। এদের রাজনৈতিক পতন সময়ের অপেক্ষা।” পাশাপাশি, নারদা প্রসঙ্গেও ফের একবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, যে সব থেকে বেশি চিৎকার করছে তাঁকে টিভির পর্দায় টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। ছোটবেলায় আমরা পড়তাম, পকেটমার হইতে সাবধান। রাস্তায় যাঁরা চুরি করে, পকেটমারি করে তাঁদের দেখবেন চুরির পর দূরে দাঁড়িয়ে চোর বলে চিৎকার করে। এরা সেই পকেটমার। নিজেরা পকেট মেরে চোর বলে চিল্লায়। বিজেপি নেতারা সেই পকেটমার। নারদায় যাঁরা যুক্ত রয়েছেন, সেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ববি হাকিম, মদন মিত্রকে গ্রেফতার করা হল। শুভেন্দুকে কেন গ্রেফতার করা হল না? মোদী যে বলছেন, না খাউঙ্গা না খানে দুঙ্গা! তাহলে শুভেন্দুকে দিয়েই শুরু করুন।
শুধু তাই নয়, বিজেপির অভিযোগকে সম্পূর্ণ নস্যাত করে অভিষেক আরও বলেন, যন্তর-মন্তরে যারা গিয়েছিলেন কষ্ট করে। কোলে পিঠে সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে যাঁরা নিজেদের হকের পাওনা আদায় করতে গিয়েছিলেন তাঁদেরকে আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। লোকসভা-রাজ্যসভার যাঁরা সাংসদ তাঁরা নিজেদের একমাসের বেতন থেকে ২৮০০ জনের কাছে কিছু অর্থ পাঠিয়েছি। এখন বিজেপি বলেছে এটা চুরি টাকা। এ নিয়ে ওরা ইডি-সিবিআই দিয়ে তদন্ত করুক। এটা পার্লামেন্টের টাকা। এটা সাংসদের মাইনে থেকে দেওয়া। ভারত সরকারের টাকা কি চুরির টাকা? আমি মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ। তাই দিচ্ছি। এখন তো বিধায়কদের মাইনে বেড়েছে। ওরাও মানুষকে দিক।
একইসঙ্গে, তৃণমূলের লক্ষ্যবস্তু যে, লোকসভা নির্বাচন তা একপ্রকার স্পষ্ট করে দিয়ে অভিষেক বলেন, “অক্সিজেন দেব না কার্বন-ডাই অক্সাইড তা মানুষ ঠিক করবে। ২০১৮ সালে যখন তিনটে রাজ্যে কংগ্রেস জিতেছিল তখন সবাই বলেছিল যে এর প্রভাব ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে পড়বে না। সেটা বিজেপি-র তরফেই বলা হয়েছিল। তাদের এই যুক্তি ধরলে ২০২৪-এ কোনও প্রভাব পড়বে না। আমাদের হাতে সময় অনেক কম। সময় অপচয় না করে সকলের একসঙ্গে কাজ করা উচিত।”