দেবিকা মজুমদার: হাইটেক টেকনোলজির যুগে এখন সরকারি দফতরগুলিও আপডেট করছে তাদের সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটগুলিকে। সেই পন্থাই অবলম্বন করছে কলকাতা পুরসভাও। জন্ম-মৃত্যু শংসাপত্রই হোক বা ট্যাক্সের বিষয়, বা কোনও অভিযোগ সব কিছুই এবার করা যাবে অনলাইনে। শুধু তাই নয়, নাগরিকদের সুবিধার জন্য চালু করা হয়েছে হোয়াটস অ্যাপ বট। যোগাযোগ করলেই হাতের মুঠোয় চলে আসবে সব তথ্য। জানানো যাবে অভিযোগ। ট্যাগ করা যাবে ছবি।
কলকাতা পুরসভার আইটি বিভাগের এক আধিকারিক জানান, আমরা এখনও পর্যন্ত আমাদের যাবতীয় পরিষেবা ডেটা সার্ভিস থেকে পরিচালিত করছি। তবে, এক এক করে ইতিমধ্যেই বিভাগগুলিকে স্টেট ডেটা সেন্টারে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত মোট দশটি বিভাগে স্টেট ডেটা সেন্টারে মাইগ্রেট করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, পার্কিং পস অ্যাপ্লিকেশন। মূলত, গাড়ি পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে পস মেশিন দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে দশ টাকাই হোক আর যাই হোক তা ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, গুগল পে, ফোন পে-র মতো ইউপিআই পদ্ধতির সাহায্যে অনলাইনেই পে করা যাবে। দ্বিতীয়, প্রোকিওরমেন্ট ডিজিটাল লাইব্রেরি বা, পিডিএল। যার মাধ্যমে আইটির সহায়তা ছাড়াই বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট নিজেদের টেন্ডারের বিষয়গুলি আপডেট করতে পারবে এবং সাধারণ মানুষ ও ভেন্ডারেরা ওখান থেকেই সমস্ত বিষয়গুলো জানতে পারবেন। এর জন্য কলকাতা পুরসভার ওয়েবসাইটে দেওয়া পিডিএ-র লিঙ্কে ক্লিক করলেই পুরো বিষয়টি জানা যাবে।
তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া একটি হোয়াটসঅ্যাপ বট চালু করা হয়েছে। যার নম্বর হল ৮৩৩৫৯৯১১১। এই নম্বরে যোগাযোগ করে নাগরিকরা সহজেই জেনে যেতে পারেন বিভিন্ন তথ্য। স্বাস্থ্য বিভাগের কোনও বুকিং হোক বা জন্ম-মৃত্যুর শংসাপত্র। সবটাই খুব সহজে করে যাওয়া যাবে এই বটে ফোন করলে। শুধু তাই নয়, কলকাতা পুরসভার কোনও পদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও ওই বটের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট শিডিউল করে নেওয়া যাবে। এই বটের সাহায্যে নাগরিকরা নিজেদের যেকোনও অভিযোগের বিষয়েও জানাতে পারবেন।
সঙ্গে ট্যাগ করতে পারবেন ছবিও। বটের সাহায্যে প্রপার্টি অ্যাসেসমেন্টের কাজও করা যেতে পারে। ট্যাক্স কবে শেষ দেওয়া হয়েছে, প্রপার্টি ডিটেইলস, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, লাইসেন্স নম্বর দিয়ে অনায়াসেই দেখে নেওয়া যেতে পারে সেই সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য। এই বট সার্ভিস কলকাতা পুরসভার তরফে নাগরিকদের দেওয়া একটি বিশেষ সুবিধা। শুধু তাই নয়, এই বট সার্ভিসের মাধ্যমে আপনি কোনও অভিযোগ জানালে সেই অনুযায়ী কাজ হওয়ার পরে একটি রেটিংয়ের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ওই রেটিংয়ে যদি কোনও নাগরিক ১ বা ২ রেটিং দেন, তাহলে সেই অভিযোগ নিরসন হয়নি বলে ধরে নেওয়া হবে এবং বিষয়টি চলে যায় স্পেশাল কমিশনারের কাছে। এ ছাড়া, আধার পরিষেবার ক্ষেত্রেও বট সার্ভিস ব্যবহার করা যাবে।
ওই আধিকারিক আরও জানান, কলকাতা পুরসভার তরফে চালু করা হয়েছে জন্ম-মৃত্যু পোর্টাল। এর মাধ্যমে সমস্ত বরো অফিস, শ্মশান ঘাট, কবরস্থান থেকে তথ্য আপডেট করা হবে। এ ছাড়া, একটি ইগেট পাস সিস্টেম চালু করা হয়েছে কলকাতা পুরসভায়। তিনটি গেটে তিনটি কিয়স্ক বানানো হয়েছে। যে কিয়স্কগুলির মাধ্যমে কলকাতা পুরসভায় যখনই ঢুকবেন, তখনই তাদের ছবি তোলা হবে এবং মোবাইলে একটি লিঙ্ক মেসেজ করে পাঠানো হবে তাদের এন্ট্রি পাস। আবার বেরোবার সময় লগআউট করে বেরোতে হবে। বিগত কয়েক মাস ধরে এই বিষয়টি চালু হয়ে গিয়েছে।
পাশাপাশি, কলকাতা পুরসভার কর্মীদের জন্য বেশ কিছু পরিষেবা অনলাইনে চালু করা হয়ে হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এমপ্লয়িজ মেডিক্লেম রিইমবার্সমেন্ট (এটি সদ্য চালু হয়েছে), টেলিফোন রিইমবার্সমেন্ট (অফিসারদের জন্য)-সহ অন্যান্য সুবিধা। এ ছাড়া, বছরে একবার যে অ্যাসেট ও এসিআর সাবমিট করতে হয়, তাও এখন অনলাইন হয়ে গিয়েছে।
পাশাপাশি, ইজ অফ ডুইং বিজনেস-এর আওতায় আমরা বিল্ডিং সিস্টেমে একটা মেজর রিফর্ম করেছি। ক্যাফ ওয়ান অর্থাৎ কমন অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম ওয়ানের মাধ্যমে আমরা প্রপার্টির নকশা অনুমোদনের জন্য অনলাইন পারমিশন দিচ্ছি এবং ক্যাফ টু-এর মাধ্যমে আমরা বাড়ি তৈরি হয়ে গেলে যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, তার জন্য অনলাইন পারমিশন দিচ্ছি। এ ছাড়া, খুব শীঘ্রই নাগরিকরা অনলাইনেই জমা করতে পারবেন সেলফ অ্যাসেসমেন্ট ফর্ম।